এম এস ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক শহর বর্ধমানে জনসমুদ্রে ভাসলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পূর্ব বর্ধমান জেলা সফরের আগে আগে অন্যান্য জেলাতে তিনি প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানে গোদার মাঠে ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় বেলা ১২.১৫ মিনিট নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে পৌঁছান। বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্য এবং অনেকগুলি প্রকল্প উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানের সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেন বকেয়া নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘একশো দিনের প্রকল্পের টাকা দিচ্ছো না কেন? পাঠাও কেন্দ্রীয় টিম অবিলম্বে টাকা নিয়ে, তা না হলে বাংলা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। আমরা সাত হাজার কোটি টাকা পাবো। যারা কাজ করেছে তাদের টাকা দিচ্ছে না !’ কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা দেখাচ্ছ, নির্বাচনের আগে বড় বড় কথা! কেন্দ্রীয় তদন্তকারী টিম পাঠাচ্ছ। ছারপোকা কামড়ালেও কেন্দ্রীয় টিম! কালিপটকা ফাটালেও কেন্দ্রীয় টিম, কারো বাড়িতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থাকলেও কেন্দ্রীয় টিম! কে কী জামা কাপড় পরবে তা নিয়েও কেন্দ্রীয় টিম, কে ডিম খাবে, না আলুভাজা খাবে সেজন্যও কেন্দ্রীয় টিম। মানুষগুলো না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছিল প্রায়। আমাদের রাজ্যের টাকা সব কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমাদের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। তা সত্ত্বেও আমি গর্ব করে বলতে পারি ৪০ লাখ জবকার্ড হোল্ডারের কাজ বাংলা সরকার দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি।’মমতা বলেন, ‘অন্য রাজ্যগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন, দাঙ্গা করা ছাড়া, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে অত্যাচার করা ছাড়া, সন্ত্রাস করা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। আর সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত শুধু আমাকে গালাগালি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাকে যত ইচ্ছে গালি দাও, আমাকে থাপ্পড়ও দিতে পারো, কিন্তু মনে রাখবে, আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না। আমি গরিবের জন্য কথা বলি, সাধারণ মানুষের জন্য কথা বলি, আমি ছাত্র যৌবনের জন্য কথা বলি। আমি হিন্দু-মুসলমান-শিখ-খ্রিস্টান-তপসিলি সকলের জন্য কথা বলি এবং বলব’ বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই সভায় তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রের ভ্রান্ত নীতি ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতা দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাজেটে বেকারদের নিয়ে কোন কথা নেই। শান্তি সম্প্রীতি একমাত্র বাংলায় আছে। মিডিয়ার মালিকদেরকে বিজেপি ব্যবহার করছে। সকাল থেকে তারা শুধু মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আমজনতা ও ছাত্র-ছাত্রীদের তার ওপর ভরসা রাখার আবেদন জানান। রাজ্যে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আগামীদিনেও হবে। কেন্দ্রের সরকার ভোটের সময় বলে 2 কোটি চাকরি হবে আর ভোট পেরিয়ে গেলেই 4 কোটি মানুষের চাকরি কেড়ে নেয়। ফেকু সরকার শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় পালন করে না। ১৫ লক্ষ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল। তিনি বলেন, কালনাতে এক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিম বর্ধমানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন আনবে। পূর্ব বর্ধমানের শস্য গলা চাষীদের তিনি শুভেচ্ছা জানান। পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক সাধারণ মানুষকেও তিনি কুর্নিশ করেন । দেওচা পাঁচামির প্রথম ফেজের কাজ শেষ হয়েছে দ্বিতীয় তৃতীয় ফেজের কাজ আগামী দিনে অনেক কর্মসংস্থান হবে বলে জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন তিনি যতগুলো প্রকল্প বলেছিলেন সবকটা প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথী ,কন্যাশ্রী ,লক্ষী ভান্ডার, সবুজ সাথী , সমস্ত প্রকল্প তিনি রুপায়ন করেছেন। তিনি বলেন এই বাংলায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে আর বাইরে যেতে হবে না। পড়াশোনার জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ১০লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যবস্থা করা হবে। রাজ্য সরকার তার গ্যারেন্টার থাকবে। পরিবারের জমি জায়গা বন্ধ রাখা দরকার হবে না। ১২ ক্লাসের ছেলেদের স্মার্ট ফোন দেয়া হবে বলে জানান। প্রশাসনিক এই বৈঠকে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক, প্রদীপ মজুমদার, স্বপন দেবনাথ, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, দুই জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার, রাজ্যের মুখ্য সচিব ও হেলথ সেক্রেটারি উপস্থিত ছিলেন। পূর্ব বর্ধমানের সভাধিপতি সম্পা ধারা,এস ডি ও কৃষ্ণেন্দু মন্ডল ,এ ডি এম সুপ্রিয় অধিকারী সহ জেলার সমস্ত বিধায়ক ও প্রশাসনিক কর্তারা হাজির হয়েছিলেন। সভাতে লাখ খানেক মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন । বর্ধমানের গোদার হেলথ সিটি এলাকায় এর আগেও তিনি সভা করে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ভ্রান্ত নীতি ও বাজেটের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন কেন্দ্রের অযোগ্য সরকার মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। কেন্দ্রের এই বাজেট মানুষকে আরও বিপদে ফেলবে। বৈঠক শেষ করে হেলিকপ্টারে আবারো তিনি নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রা শুরু করেন ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct