নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: কলকাতা হাইকোর্টের আরেক বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুও এদিন এক মামলায় সিবিআই কে কড়া ভৎসনা করলেন। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইয়ের দেওয়া রিপোর্ট দেখে ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। এদিন কলকাতা হাইকোর্টে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একটি রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে জমা দেয় সিবিআই। কিন্তু সেই রিপোর্টের সঙ্গে আইনজীবীর দেওয়া রিপোর্টে কোন মিল নেই! এদিন বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু সেই কথা উল্লেখ করে বলেন, 'দেশের প্রধান তদন্তকারী দলের এমন ভুল কখনই কাম্য নয়।'তিনি আরও বলেন, 'সিবিআইয়ের দেওয়া রিপোর্টে যা আছে তার থেকে অনেক বেশি তথ্য রয়েছে আইনজীবীর দেওয়া রিপোর্টে। এটা কীভাবে হয়? এটা কি আপনাদের রেপুটেশনের সঙ্গে মিল খায়?'এরপরই বিচারপতি বসু সিবিআইয়ের উদ্দেশ্যে বলেন, 'সব পেপার তিনবার চেক করে পাঠান। তদন্তে এত দেরি হচ্ছে কেন? সমাজ থেকে জঞ্জাল সরিয়ে উপযুক্তদের সুযোগ করে দিন।'শুধু সিবিআই নয়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে হাইকোর্ট। এজলাসে এসএসসিকে বিচারপতি বসু বলেন, 'সব কি আদালতের দায়িত্ব? কেউ ঠকিয়ে চলে গেলে আপনি কি চুপ করে বসে থাকবেন? নিজের ক্ষমতা কেন প্রয়োগ করছেন না? সবকিছু মুছে এগিয়ে চলুন।' এই মামলায় আগামী বৃহস্পতিবার সিবিআই ফের রিপোর্ট দিতে বলল হাইকোর্ট।কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থার কাজের ধরনে বিরক্ত বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু । মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে বিচারপতি বসু বলেন, "সিবিআই যা করেছে সেটা খুব অন্যায় । কেন তদন্তে এত দেরি করছে সিবিআই ? জানি না সিবিআই কেন এত ধীর গতিতে চলছে ।"এদিন চারজন এসএসসি প্রার্থীর ওএমআর সিট আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু । এদিন সকালে এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট বন্ধ খামে হাইকোর্টে জমা দেয় সিবিআই । দেখা যায় এই রিপোর্টের সঙ্গে সিবিআই'য়ের আইনজীবীর বক্তব্যের কোনও মিল নেই । তারপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি বসু । তিনি বলেন," চার জনের ওএমআর শিট পরীক্ষার নির্দেশ ছিল । এদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সারবত্তা আছে । দেশের একটি প্রধান তদন্তকারী সংস্থার থেকে এমন ভুল কাম্য নয় ।"এখানেই না থেমে বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু এদিন আরও বলেন,- "সিবিআই'য়ের ফাইল করা রিপোর্টে যা আছে তার চেয়ে তাদের আইনজীবীর ফাইলে আরও বেশি তথ্য আছে । এটা কীভাবে হয়? এটা কি আপনাদের বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে মিল খায়? আপনাদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে । সব পেপার তিনবার যাচাই করে পাঠানো উচিত্ । এত দেরি হচ্ছে কেন । সমাজ থেকে জঞ্জাল সরিয়ে উপযুক্তদের জায়গা করে দিন ।"সিবিআই'কে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে ও এসএসসি'র চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশও এদিন হাইকোর্ট দিয়েছে । এদিন এসএসসি-এর ভূমিকা নিয়েও সরব হন বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু । তিনি বলেন,"সব কি আদালতের দায়িত্ব? আপনাকে কেউ ঠকিয়ে চলে গেল । চুপ করে বসে থাকবেন? এত ভয় কেন? । যা হয়েছে মুছে এগিয়ে চলুন । নিজের ক্ষমতা কেন প্রয়োগ করছেন না? এসএসসি চেয়ারম্যানকে বলুন এদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করুন । এসএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলুন । যাঁদের ক্ষেত্রে নম্বর বাড়িয়ে চাকরি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন, তাঁদের সবাইকে ডেকে পাঠান । তাঁদের বিষয়ে এসএসসি'কে ব্যবস্থা নিতে হবে । এসএসসি যত দ্রুত সম্ভব চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করুক ।" আগে বৃহস্পতিবার ফের এই বিষয়ে হাইকোর্টে রিপোর্ট দেবে সিবিআই ।ওইদিন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct