নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: রাজ্য সরকার কীভাবে নিজস্ব জমি বণ্টন করতে পারবে বা স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে লিজ দিতে পারবে তার ব্যাখা দিয়ে ১৯৬৫ সালে প্রণয়ণ করা হয়েছিল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ম্যানুয়াল অ্যাক্ট। সেই আইনের ভিত্তি ছিল স্বাধীনতার পরে প্রণীত হওয়া ১৯৫৫ সালের ভূমিসংস্কার আইন। কিন্তু তারপরও দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে রাজ্য সরকারের নিজস্ব কোনও নীতি ছিল না এই জমি বন্টন বা তা লিজ দেওয়ার প্রসঙ্গে। বাম জমানায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে ২০০২ সালে জমি বণ্টন ও লিজ দেওয়া নিয়ে একটি নির্দিষ্ট পলিসি বা নীতি নিয়ে আসে রাজ্য সরকার। নাম দেওয়া হয় ‘ভূমি প্রদান নীতি’। ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ম্যানুয়াল অ্যাক্ট'র ওপর ভিত্তি করেই এই নয়া নীতি তৈরি ও সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল সরকার। তৃণমূল জমানায় ২০১৬ সালে এই নীতিতে আবারও কিছু রদবদল করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু এবার ১৯৫৫ সালের ভূমিসংস্কার আইনেই কিছু পরিবর্তন ঘটাতে চাইছে রাজ্য সরকার। কেননা কে এম ডি এ সহ রাজ্যের ২১টি উন্নয়ন সংস্থার অধীনে থাকা জমি লিজে আমজনতাকে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। তার জন্যই আগামী বাজেট অধিবেশনেই ১৯৫৫ সালের ভূমিসংস্কার আইনে সংশোধনী আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। নতুন আইনে মালিকানাস্বত্বও দেওয়া হচ্ছে। চাইছে। এর পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের অন্যান্য দফতরের অধীনে লিজে থাকা জমির মালিকানাস্বত্ব দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা। কিন্তু তার জন্য আইন সংশোধন না করলে চলবে না। সেই লক্ষ্যেই আগামী বাজেট অধিবেশনেই ১৯৫৫ সালের ভূমিসংস্কার আইনে সংশোধনী আনতে চলেছে সরকার। বাজেট অধিবেশন বসছে ৮ ফেব্রুয়ারি। এর আগে ভূমি সংস্কার আইন একাধিকবার সংশোধিত হয়েছে বা তাতে নানা বিষয় যোগ অথবা বিয়োগ হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম রাজ্য সরকার বিধানসভায় বিল এনে ১৯৫৫ সালের আইনে সংশোধনীর মাধ্যমে লিজে দেওয়া জমি ফ্রি হোল্ড বা বিক্রির পথে হাঁটতে চলেছে। রাজ্যের লিজ সংক্রান্ত যে আইন আছে, স্বাধীনতার পর এই প্রথম তাতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। সরকারের দাবি, এর ফলে উপকৃত হবেন লক্ষাধিক মানুষ ও বিভিন্ন শিল্পসংস্থা। বাড়বে রাজ্যের আয়ও।আমজনতার লাভের জায়গা কোথায়? আগেকার আইনে জমি লিজ নেওয়ার সময় বাজার দরের ৯৫ শতাংশ টাকা সেলামি হিসেবে দিতে হয় লিজ প্রাপককে। সেই সঙ্গে ভাড়া বাবদ প্রতি বছর জমির মূল্যের ০.৪ শতাংশ হারে টাকা দিতে হয় রাজ্যকে। কিন্তু সেই জমির মালিকানাস্বত্ব না থাকায় লিজে পাওয়া জমি অন্যকে ব্যবহার করতে দিতে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হত যা বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয় ছিল। একই সঙ্গে লিজে পাওয়া জমি দেখিয়ে ব্যাঙ্কের ঋণ পেতেও যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হতো। সেই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। তাঁদের দাবি, মালিকানাস্বত্ব পেতে এবার থেকে জমির বর্তমান বাজারদরের ১০ শতাংশ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে আবেদনকারীদের। এভাবে জমির মালিকানা পেয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা লিজ পুনর্নবীকরণ বা প্রতি বছর ভাড়া দেওয়ার ঝক্কি থেকে মুক্ত হতে পারবেন। লিজে পাওয়া জমি অন্যকে ব্যবহার করতে দিলে রাজ্যের অনুমতিও আর লাগবে না। জমি বন্ধক দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতেও সমস্যা হবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct