মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার পক্ষ প্রধানত তিনটি। ইসরাইল, আরব বিশ্ব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ের সাথে এই তিন পক্ষের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যেপ্রাচ্য শান্তিপ্রতিষ্ঠার পথে এই ত্রিপক্ষীয় মতপার্থক্য এবং বিরোধই মূলত দায়ী। এক্ষেত্রে আরববিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা হলেও ইসরাইলের বর্বরোচিত ও অমানবিক অন্যায় আচরণকে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার একমাত্র অন্তরায় বলে বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক মনে করেন। তার কারণ হচ্ছে, এ পর্যন্ত আন্তর্জতিক পর্যায়ে এবং রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক যতগুলো প্রয়াস ও প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে তার প্রতিটিকেই ইসরাইল অমান্য করেছে। ফিলিস্তিন সঙ্কট নিয়ে লিখেছেন ইলিয়াজ হোসেন। আজ প্রথম কিস্তি।
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার পক্ষ প্রধানত তিনটি। ইসরাইল, আরব বিশ্ব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ের সাথে এই তিন পক্ষের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যেপ্রাচ্য শান্তিপ্রতিষ্ঠার পথে এই ত্রিপক্ষীয় মতপার্থক্য এবং বিরোধই মূলত দায়ী। এক্ষেত্রে আরববিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা হলেও ইসরাইলের বর্বরোচিত ও অমানবিক অন্যায় আচরণকে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার একমাত্র অন্তরায় বলে বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক মনে করেন। তার কারণ হচ্ছে, এ পর্যন্ত আন্তর্জতিক পর্যায়ে এবং রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক যতগুলো প্রয়াস ও প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে তার প্রতিটিকেই ইসরাইল অমান্য করেছে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাব নম্বর ১৮১ সর্বসম্মতভাবে গৃহিত হয়, যাতে বলা হয়, ব্রিটিশ ম্যান্ডেটকৃত ২০৭৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের প্যালেস্টাইনের সমান দুই ভাগে ভাগ হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে, ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সমর্থনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও আজ অব্দি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হয়নি। বরং ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইহুদিদের গণহত্যার মুখে সাড়ে ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোতে শরণার্থী হয়। বিতাড়িত সেই হতভাগ্য জনগোষ্ঠির উত্তরসূরীরা সংখ্যায় আজ ৫০ লক্ষ। ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা দখল করে নেয় ফিলিস্তিনিদের সহায়-সম্পত্তি সবকিছু, যার কিছুই এখনো ফেরত দেয়নি। অথচ, রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৯৪ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে বিতাড়িতদের মধ্যে যারা ফেরত আসতে চায় তাদের ফিরতে দিতে হবে। আর যারা আসতে চায় না তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তারপর ১৯৬৭ সালের ৫ জুন থেকে ১০ জুন, মাত্র ছয়দিনের যুদ্ধে জর্ডানের দখলে থাকা জেরুজালেমসহ পশ্চিমতীর এবং মিশরের দখলে থাকা গাজা স্ট্রিপ ইসরাইল দখল করে নেয়। এই দুইটি এলাকার আয়তন ৬০২০ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৬৭ সালের নভেম্বর মাসে নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব নম্বর ২৪২ পাস হয় এবং তাতে বলা হয়, ইসরাইল অতিসত্বর ছয়দিনের যুদ্ধে যেসব এলাকা দখল করেছে তা ছেড়ে দিতে হবে।
বিগত ৫৪ বছরে এই প্রস্তাবের প্রতি সামান্য কর্ণপাত করেনি ইসরাইল। ১৯৭৮ সালে মিশর-ইসরাইলের মধ্যে ক্যাম্পডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের পর রাষ্ট্রসংঘে পুনরায় প্রস্তাব নাম্বার ৪৪৬ পাস করে। তাতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৬৭ সালের অধিকৃত এলাকা ইসরাইল ছেড়ে দেবে এবং পশ্চিমতীরে ইহুদি পুনর্বাসন বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ইসরাইল এসব শর্তের কিছুই মানে না। ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রসংঘ পাশ করে ৪৬৫ নম্বর প্রস্তাব। তাতে জেরুজালেমসহ পশ্চিমতীরে ইহুদি বসতি ভেঙে ফেলতে বলা হলেও ইহুদিরা তা অগ্রাহ্য করে নতুন ইহুদি পুর্নবাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের আয়তন ছিল ৫০০০ বর্গ মাইল কিন্তু ক্রমাগতভাবে ফিলিস্তিনের ভূ-খ- দখল করার ফলে ১৯৫৫ সালে ইসরাইলের আয়তন বেড়ে হয় ৮,০০০ বর্গ মাইল। ১৯৬৭ সালে হয় ৩০,০০০ বর্গ মাইল। সারা দুনিয়ার প্রচ- ঘৃণা এবং প্রতিবাদকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আজ ৭০ বছর যাবত ইসরাইল ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠির উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ, পার্শ্ববর্তী দেশ জর্ডান, সিরিয়া, মিশর ও লেবাননে বোমা হামলা এবং তিউনিসে পিএলও সদর দপ্তরে বোমা হামলা করে মধ্যপ্রাচ্য শান্তির প্রয়াসকে দূরে ঠেলে দিয়ে আরব বিশ্বে একটি অস্থির রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। যতদিন না ইসরাইলি আগ্রাসী মনোভাবের পরিবর্তন হবে ততোদিন পর্যন্ত আরব এলাকায় শান্তি ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ফিলিস্তিন প্রশ্নে যে দেশ ইসররাইলের উপর সরাসরি প্রভাব খাটাতে পারে তা হলো যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই দেশ কৌশলগত মৈত্রিতে আবদ্ধ। এই দুই দেশের সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু তাদের কৌশলগত আঁতাতের কোনো পরিবর্তন আসে না। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইসরাইলের স্বার্থ আগে দেখে তারপর অন্যসব। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বব গেটস বলেন, বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে যে মার্কিনবিরোধী মনোভাব, তার পিছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যনীতি। ১৯৪৮ সালে সৌদি বাদশাহ প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, ফিলিস্তিন প্রশ্নে তিনি যেন নীরব থাকেন বা আরবদের সমর্থন করেন। প্রতিত্তোরে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্ত কোন আরব লবি নেই, যাদের জোরে তিনি পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct