ফোনালাপে একদিন
কনক কুমার প্রামানিক
তখনো ভোরের আলো পরিস্কার হয়ে ফোটেনি। বাইরে আবছা আলো আঁধারির সন্ধিক্ষণ। দু’একটা রাতজাগা পাখি আড়মোড়া ভেঙে সবে ডাকতে শুরু করেছে। ঘুমে কাতর দু’চোখে রাজ্যের ঘুম এসে জমা হয়েছে। বাইরের শব্দগুলো কানে আসছে কিন্তু ঘুমে চোখ ছাড়ছে না। হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বিকট শব্দে বেজে উঠলো। বিরক্তি এবার চরমে পৌঁছাল। শীতের বেলা লেপমুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। ফোনটা একটু দূরে চার্জে দিয়ে রেখেছিলাম তাই সেখানে গিয়ে ফোন রিসিভ করতে মন চাচ্ছিল না। তবুও অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও ফোনটা রিসিভ করলাম। অপরিচিতি নম্বর। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ভেসে এলো-
- হ্যালো বাবা, আমি পীর আউলিয়া বলছি। - হ্যাঁ বলেন- বাবা তোর নাম কি? বাড়ি কোথায়?- আমার নাম কনক, বাড়ি নওগাঁ। কেন ফোন করেছেন?- আমি আল্লাহ্র অলি আউলিয়া। মানুষের সোনা-দানা, টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত বৃদ্ধি করে দেই।এতক্ষণে আমার চোখ থেকে ঘুম টুটে গেল। চমকে উঠলাম। এত ভোরে এসব আজগুবি কথাগুলো শুনে কি বলবো ভেবে উঠতে পারছিলাম না। তিনি এবার বললেন,- কিরে বাবা কি হল? ভয় পেলি নাকি? কোন কথা বলছিস না যে?- হ্যাঁ বাবা বলুন?- শোন তোর টাকা-পয়সা, সোনা-দানা নিয়ে অমুক জায়গায় আয়। ডাবল করে দিবো।আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তিনি আবার বললেন, ভয় নেই বাবা। আমি বললাম, এতে আপনার কি লাভ? তিনি বললেন, ওরে আমি আল্লাহ্র একজন নেক বান্দা, অলি-আউলিয়া মানুষের উপকার করায় উদ্দ্যেশ্য। আমার কোন লাভ নেই। আমি তাকে পূনরায় জিজ্ঞেস করলাম আপনার হাদিয়া কত? তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সুরে বললেন, ছিঃ ছিঃ বেটা তুই কি বলছিস। আল্লাহ নাখোস হবেন! তোর ধন-সম্পদ ডাবল হওয়ার পর আল্লাহ্র ওয়াস্তে মাজারে তোর খুশিমতো কিছু দান খয়রাত করে দিস। আমার কিছু লাগবে না। আমি তাকে বললাম,- কতদিন লাগবে বাবা?- ২৪ ঘন্টা মানে একদিন একরাত।- আমি তো যেতে পারবো না বাবা, আপনাকে আসতে হবে - তোর ঠিকানা বল - পুলিশ সুপারের বাসভবন, নওগাঁ। এখানকার এসপি আমার বাবা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোন কেটে দিলেন। এরপর ঐ নম্বরে বহুবার ফোন করার চেষ্টা করেছি। আর কোনদিন কল ঢোকেনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct