আপনজন ডেস্ক: বেসরকারি শিক্ষা সমীক্ষক সংস্থা ‘এএসইআর’ বা এসার ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষার উপর দেশজুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে আসছে। এই বছর দেশের ৬১৬টি জেলার ১৯ হাজার গ্রামে ৩ থেকে ১৬ বছর বয়সের ৬.৯ লক্ষ শিশুকে নিয়ে সমীক্ষা করেছিল। সমীক্ষাটি তাদের ২৭ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা পরিচালিত হয়। দিন কয়েক আগে তাদের ২০২২সালের সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘এসার’। এই সমীক্ষায় তিনটি বিষয় উঠে আছে। স্কুলে নাম নথিভুক্ত, পড়ার ক্ষমতা এবং গণিতের দক্ষতা। শিক্ষার্থীদের চারটি স্তরের পাঠ্যসহ একটি বিশেষ যাচাই করা হয়। প্রথমত, বর্ণমালার অক্ষর, দ্বিতীয়, সাধারণ শব্দ, তৃতীয়, চারটি সহজ বাক্য সমন্বিত একটি সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ, চতুর্থটি কিছুটা জটিল শব্দভাণ্ডার যুক্ত একটি দীর্ঘ পাঠ্য। তৃতীয় শ্রেণির বাচ্চারা সাধারণত প্রায় আট বছর বয়সি হয়। এসারের জরিপে দেখা গেছে যে তৃতীয় শ্রেণির বাচ্চাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজন শিশু তাদের পাঠ্য বই রিডিং পড়তে পারে না। দেশের ১৯টি ভাষার পড়ুয়াদের মধ্যে এই সমীক্ষা হয়। এ রাজ্যে বাংলায় চারটি বিভাগ ছিল। স্ট্যান্ডার্ড-২ পাঠ্যে এগারো লাইন পড়তে দেওয়া হয়। স্ট্যান্ডার্ড-১ এ চার লাইন। এছাড়া অক্ষর ও শব্দ পড়তে দেওয়া হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবাংলা প্রথম শ্রেণির (সরকারি ও বেসরকারি স্কুল মিলিয়ে) ২৪.৫ শতাংশ পড়ুয়া অক্ষর পড়তে পারে না। চতুর্থ শ্রেণির ৫.২ শতাংশ পড়ুয়া অক্ষর পড়তে পারে না। ১৮.১ শতাংশ পড়ুয়া অক্ষর পড়তে পারলেও ২২ শতাংশ মাত্র শব্দ পড়তে পারে। ৪২.৬ শতাংশ রিডিং পড়তে পারে। এমনকী যারা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে তাদের মধ্যে মাত্র ৬৯.২ শতাংশ দীর্ঘ লাইন পড়তে পারে। সরল সংক্ষিপ্ত লাইন পড়তে পারে মাত্র ১৩.১ শতাংশ। শব্দ পড়তে পারে ৯.৯ শতাংশ, অক্ষর পড়তে পারে ৫.১ শতাংশ। কিন্তু অষ্টম শ্রেণির ২.৮ শতাংশ পড়ুয়া কোনও অক্ষর পড়তে পারে না। প্রথম শ্রেণির ২১.৯ শতাংশ পড়ুয়া ১-৯ গুনতে পারে না। অষ্টম শ্রেণির ২২.৩ শতাংশ মাত্র বিয়োগ ও ৩১.৮ শতাংশ ভাগ করতে পারে।
তুলনামূলক চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা পাটিগণিতে খানিকটা ভাল। চতুর্থ শ্রেণির ২০.১ শতাংশ বিয়োগ করতে পারে। অনুরূপবাবে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা ১৮.৮ শতাংশ, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারা ১৯.৪ শতাংশ , ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ার ১৯.৬ শতাংশ আর সপ্তম শ্রেণির পড়ৃুয়াদের মাত্র ১৮.৩ শতাংশ বিয়োগ করতে পারে। একইভাবে ভাগ করার ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের ৩১.৮ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণির ২৯.২ শতাংশ, ষষ্ঠ শ্রেণির ৩০. ৭ শতাংশ, পঞ্চম শ্রেণির ২৭.৫ শতাংশ ও চতুর্থ শ্রেণির ২১.৪ শতাংশ পড়ুয়ারা সক্ষম। ইংরেজির ক্ষেত্রে এ রাজ্যের প্রাথমিক পড়ুয়ারা খুবই দুর্বল। প্রথম শ্রেণির ২৯.৯ শতাংশ পড়ুয়া ইংরেজির বড় হাতের অক্ষর সম্বন্ধে ধারণাহীন। দ্বিতীয় শ্রেণির ১৭.৪ শতাংশ ও তৃথীয় শ্রেণির ১০.৫ শতাংশ পড়ুয়া বড় হাতের ইংরেজি অক্ষর সঠিকভাবে চিনতে পারে না। সরল ইংরেজি পড়ার ক্ষেত্রেও রাজ্যের পড়ুয়ারা দুর্বল। ‘হোয়ার ইজ ইওর হাউস’ জাতীয় সাধারণ বাক্য পড়ার েক্ষত্রে সক্ষম অষ্টম শ্রেণির ৪০.৭ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণির ৩৪ শতাংশ, ষষ্ঠ শ্রেণির ৩০.৫ শতাংশ পড়ুয়া। তবে, রাজ্যে মিড ডে মিলের ক্ষেত্রে বাম আমলের তুলনায় যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে রিপোর্টে উঠে এসেছে। ২০১০ সালে যেখানে একদিনে পরিদর্শিত ৬৩.৪ শতাংশ স্কুলে মিড ডে মিল দিতে দেখা গেছিল ২০২২ সালে তা ৯২.৫ শতাংশে পৌঁছেছে। মিড ডে মিলের রান্না ঘরের সংখ্যাও বাম আমলের থেকে অনেক বেড়েছে। স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থা এখন তুলনামূলক ভাল হলেও সব স্কুলে এই ব্যবস্থা নেই। ২০১০ সালে ১৯.৩ শতাংশ স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থা ছিল না। তা ২০২২ সালে কমে হয়েছে ১২.৩ শতাংশ। শৌচাগারের ক্ষেত্রে বড় সাফল্য পেয়েছে মমতার সরকার। ২০১০ সালে যেখানে ৭.৬ শতাংশ স্কুলে কোনও শৌচাগারের ব্যবস্তা ছিল না, তা কমে মাত্র ১ শতাশে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য স্বতন্ত্র শৌচাগারের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। ২০২১ সালে ৪৪.৫ শতাংশ স্কুলে যেখানে ছাত্রীদের আলাদা শৌচাগার ছিল না, সেখানে এখন মাত্র ১৪ শতাংশ স্কুলে নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct