সম্প্রতি তালিবান শাসিত আফগান সরকার ঘোষণা করেছে, উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ মহিলাদের। তাই বিদ্বজ্জনরা বলছেন আফগান মহিলাদের পড়াশোনায় নিষেধাজ্ঞা মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকেও এর তীব্র প্রতিবাদ এসেছে। মিশরের আল আজহার মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েব, যাকে সুন্নি ইসলামের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ বলে মনে করা হয়, এক বিবৃতিতে বলেছেন, আফগানিস্তানে মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত তালিবান নিয়েছে, তা ইসলামী শরিয়াহ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ, শরিয়াহ আইনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নারী ও পুরুষকে জ্ঞানার্জন করতে বলা হয়েছে। তা নিয়ে লিখেছেন সরদার সিরাজ। আজ প্রথম কিস্তি।
মহা পরাক্রমশীল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন জোটকে যুদ্ধে পরাজিত করে তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা পুনর্দখল করে ১৫ আগস্ট, ২০২১ সালে। তারা দেশটির নতুন নামকরণ করে ‘ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান’। তালিবানের এ বিজয়ে বিশ্ববাসী হতভম্ব হয়েছিল এ কারণে যে, বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোকে মাদ্রাসায় পড়ুয়ারা পরাজিত করেছিল। বিভিন্ন দেশে ইসলামী পুনর্জাগরণবাদীদের মধ্যে নতুন আশা সঞ্চারিত হয়েছিল। আফগানরাও তিন দশক পর বিদেশি দখলমুক্ত হয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল। তারা মনে করেছিল, তালিবান ১৯৯৬-২০০১ সময়ের প্রথম সরকারের ন্যায় মনোভাব পরিহার করে নমনীয় হবে। বিশ্ববাসীও তাই মনে করেছিল। তাই তাদের বিজয়কে অনেকেই অভিনন্দন জানিয়েছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের কল্যাণকর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক লেখালেখিও হয়েছিল। সর্বোপরি তালিবানের শাসনামল কল্যাণকর হলে শুধুমাত্র সে দেশের মানুষেরই কল্যাণ হবে না, সেই সাথে অন্যান্য ইসলামপন্থীও অনুপ্রাণিত হবে। অনুকরণীয় হবে। জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসী প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিও জানিয়েছিল।
সামগ্রিক বিচারে আফগানিস্তানে দুর্নীতি বিদায় নেওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে তালিবানরা বুঝিয়ে দিতে চাইছিল তারা ইসলামি শাসনের মধ্যে থাকলেও পরিপূর্ণ দেশ হওয়ার পথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে হবে। কিন্তু, তালিবানরা তাদের নিজেদের জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের জেরে আফগান শাসনে ফিরে এলও বহু ক্ষেত্রে মানুষ হতাশা দেখতে পাচ্ছে। যদিও প্রথম তালিবান শাসন আর বর্তমান তালিবান শাসনের মধ্যে এখন অনেক পার্থক্য। এখনকার তালিবানরা অনেক মডারেট। তবুও তার মধ্যে প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিয়েছে সেখানকার মহিলাদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা এখনও বন্ধ রাখায়। তুরস্ক. ইরান সহ বুহ ইসলামি দেশে এখন মহিলারা বহু এগিয়ে। মুসলিম মহিলারা মহাকাশ পাড়ি দেওয়া থেকে শুরু করে দ্রুতগামী ট্রেনও চালাচ্ছে। আর সেই সাফল্যে সোপানে তারা উঠছে হিজাব বা বোরখা পরেই। তাই উচ্চশিক্ষার সঙ্গে তাদের কোনও সঙ্ঘাত নেই। কিন্তু তালিবানরা উল্টো পথে হাঁটছে।
গত ২০ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী এক চিঠিতে আফগানিস্তানে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এই ঘোষণা অবিলম্বে কার্যকর হবে। এ ঘোষণার চরম নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববাসী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে আফগান মহিলাদের পড়াশোনায় নিষেধাজ্ঞা মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকেও এর তীব্র প্রতিবাদ এসেছে। মিশরের আল আজহার মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েব, যাকে সুন্নি ইসলামের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ বলে মনে করা হয়, এক বিবৃতিতে বলেছেন, আফগানিস্তানে মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত তালিবান নিয়েছে, তা ইসলামী শরিয়া আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ, শরিয়া আইনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নারী ও পুরুষকে জ্ঞানার্জন করতে বলা হয়েছে। সর্বোপরি তিনি বিজ্ঞান, শিক্ষা ও রাজনীতির মতো ক্ষেত্রে বহু মুসলিম নারীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সিদ্ধান্তটি পরিবর্তনের জন্য তালিবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বের প্রথম ইসলামী বিপ্লব সফলকারী দেশ ইরানের এমপি মেহেদি ইসমাইলি বলেছেন, জনহিতকর মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যদি আফগান সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করে তাহলে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আফগান নারী শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করবে। তিনি আরো বলেছেন, দুর্ভাগ্যবশত, আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
(ক্রমশ...)
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct