নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক যখন চূড়ান্ত বিরোধীতায় পূর্ণ ছিল তখন বার বার দেখি দিল্লীর রাজপথে ২৬ জানুয়ারির কুচকাওয়াজে বাংলার ট্যাবলো খারিজ করে দিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কিন্তু এবছর ছবি বদলেছে। কেন্দ্র ও রাজ্য একে অপরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগোবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সূত্রেই দিল্লির রাজপথে গণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে আবারও ঠাঁই পেয়ে গেল বাংলার ট্যাবলো। সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর রাজ্যের পাঠানো ট্যাবলোতে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি। ন এবছর গণতন্ত্র দিবসে বাংলার ট্যাবলোর থিম হতে চলেছে ‘দুর্গা ও নারী ক্ষমতায়ন’। বাংলার দুর্গাপুজোকেl Heritage তকমা দিয়েছে UNESCO। মূলত সেই দুর্গাপুজোকেই থিম করে এবারের ট্যাবলো সাজাচ্ছে রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে তুলে ধরা হবে রাজ্যের নারীশক্তির ক্ষমতায়ণকেও।উল্লেখ্য, গতবছর সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীকে থিম করে দিল্লিতে ট্যাবলো পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে ফোকাসে রাখা হয়েছিল আজাদি কি অমৃত মহোৎসবকেও। কিন্তু কেন্দ্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রকের বিশেষজ্ঞদের দল বাংলার ট্যাবলো বাতিল করে দেয়। তার আগে ২০২০ সালের বাংলার পাঠানো ‘কন্যাশ্রী’, ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পের আদলে তৈরি ট্যাবলও প্রত্যাখ্যান করে কেন্দ্রীয় দল। এসব নিয়ে নবান্নের সঙ্গে দিল্লির বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও সেই সময় দাবি করেছিলেন, কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের জেরেই বাংলার ট্যাবলো বার বার প্রত্যাখান করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কিন্তু এবারের ছবুটা আলাদা। ২০২৪ এর কথা মাথায় রেখেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর পাশাপ্সহি সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই এবার যখন বাংলা ‘দুর্গা ও নারী ক্ষমতায়ন’ নিয়ে ট্যাবলো সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন আর তা প্রত্যাখান করেনি কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি। বরঞ্চ তা গৃহীতও হয়েছে। শুধু তাই নয় এই ট্যাবলো যদি এবারে প্রথম পুরস্কারও পেয়ে যায় তাহলেও বলার কিছু থাকবে না। কেননা মূল লক্ষ্য তো মমতাকে খুশি করা।অবশ্য এর পাশাপাশি অন্য একটি যুক্তিও শোনা যাচ্ছে, বাংলার ট্যাবলোতে দুর্গাপ্রতিমার সঙ্গে মহিলা ঢাকিরা থাকবেন। ঢাকের বাজনার সঙ্গে শোনা যাবে চণ্ডীপাঠ। কলকাতার পুজো ইউনেস্কোর সম্মান পেয়েছে, সেটাও প্রচার করা হবে ট্যাবলোতে। তাই এবার যদি এই ট্যাবলো বাতিল করে দিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি তাহলে বাংলার বুকে রাজনৈতিকভাবেই বেকায়দায় পড়তে হত বিজেপিকে। বাংলার দুর্গোৎসবকে অসম্মান করার অভিযোগ উঠত গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ এড়াতেই সম্ভবত কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত। তাছাড়া এ বছর এমন কোনও রাজনৈতিক পটভূমিকাও নেই যে কারণে এই ট্যাবলো বাতিল হতে পারে। বরঞ্চ কেন্দ্র-রাজ্য সুসম্পর্ক, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সুসম্পর্ক বাংলাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। তাই দিল্লির রাজপথে আবারও দেখা যাবে বাংলার ট্যাবলোকে, বাংলার দুর্গাপুজোকে, বাংলার নারীশক্তিকে। জয় বাংলা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct