ফৈয়াজ আহমেদ, আপনজন: গ্রামাঞ্চলে এক সময় ছিল ডাহুক পাখির অবাধ বিচরণ। সকাল-সন্ধ্যা কিংবা মধ্যরাতে ভেসে আসতো ডাহুকের ‘কোয়াক-কোয়াক’ সুর। বাড়ির পুকুর, ডোবা-নালার কচুরিপানায়, ঝোঁপ-ঝাড় আর বেত বনে ছোটাছুটি করতো ওরা। ঘুরে বেড়াতো দল বেঁধে। তবে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না পরিবেশবান্ধব এ পাখির আনাগোনা। আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্য সংকট, শিকারীদের উৎপাতসহ নানা কারণে প্রকৃতি থেকে নীরবে সুন্দর এ পাখির সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রাণী বিশারদরা।
ডাহুকের বৈজ্ঞানিক নাম: Amaurornis phoenicurus, এটি Rallidae (রেলিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত Amaurornis (আমুরর্নিস) গণের অন্তর্গত মাঝারি আকৃতির পাখি। বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ লাললেজী কালো পাখি। এদেরকে ‘ডাইক’, ‘পান পায়রা’ ‘ধলাবুক ডাহুক’সহ আরও বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়। মাঝারি আকৃতির এ পাখি দেখতে খুবই নান্দনিক। ডাহুক খুব চঞ্চল প্রকৃতির পাখি। ছোট লেজ দ্রুত নাচিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটতে পারে ওরা। লেজের নিচের অংশে রয়েছে লালচে আভা। বিপদ আঁচ করতে পারলে পলকেই ঝোঁপের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে রয়। লম্বায় ৩২-৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে প্রায়। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। পা সুরু ও লম্বা লম্বা পায়ের নখ। পিঠ ধূসর আর খয়েরি-কালো। মাথা, মুখ, গলা, বুক আর পেট ধবধবে সাদা। ঠোঁট হলুদ রঙের। ঠোটে আছে লাল রঙের কিঞ্চিত দাগ। ডাহুকের প্রিয় খাদ্য কীটপতঙ্গ আর জলজ পোকামাকড়। এছাড়াও শেওলা, ধান, শামুক, কেঁচো, জোঁক, ছোট মাছ খেয়ে থাকে। এরা বাসা বাঁধে জলাধার, ঝোঁপ কিংবা বাঁশঝাড়ে। তবে জলই এদের প্রকৃত আবাসস্থল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজনন সময়। এরা ৬-৭টি ডিম দেয়। স্ত্রী-পুরুষ পাখি উভয়েই তা দেয় ডিমে। ডিম ফুটে ১৮ থেকে ২০ দিনে। বাড়ির পাশের ডোবা কিংবা ঝোঁপে আগে হরহামেশা ডাহুক পাখির দেখা মিলতো। এখন ‘কালেভদ্রে’ও সুন্দর এ পাখি চোখে পড়ে না।
ডাহুক পাখি কমে যাওয়ার কারণ: ডাহুক একটি উপকারি পাখি। এগুলো কমে যাওয়ার পিছনে মূল কারণই হচ্ছে উপযুক্ত আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়া। এ কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডাহুকের বিচরণ ও প্রজনন। দায়ী জলজ পরিবেশ দূষণও। পাশাপাশি শিকারও একটি বড় হুমকির কারণ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct