আপনজন ডেস্ক: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সোমবার লাভ জিহাদ আইনের সাংবিধানিকতা এবং কথিত গণ ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি করেছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি নরসিমা এবং বিচারপতি জেপি পারদিওয়ালার সামনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় প্রবীণ আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে, রেকর্ডে অ্যাডভোকেট ইজাজ মকবুল এবং অন্যরা জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের পক্ষে উপস্থিত হন। প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল, দুশান্ত ডেভ, সিইউ সিং, ইন্দিরা জয় সিং, বৃন্দা গ্রোভার এবং অন্যান্যরাও অন্যান্য পক্ষের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। সোমবার আদালত শুধুমাত্র জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের দায়ের করা আবেদনের উপর নোটিশ জারি করেছে এবং শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে। জমিয়ত উলেমা হিন্দের পিটিশন নম্বর হল দেওয়ানি রিট পিটিশন ৪০/২০২৩। শুনানির সময়, সিনিয়র অ্যাডভোকেট দুশান্ত দাভের অনুরোধে ভারতের প্রধান বিচারপতি পিটিশনকারী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়ের আইনজীবীকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের (মুসলিম এবং খ্রিস্টান) বিরুদ্ধে দায়ের করা উপাদানগুলি মুছে ফেলার নির্দেশ দেন। যার ভিত্তিতে তিনি আদালতকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি আদালতের আদেশ মেনে চলবেন এবং বিতর্কিত বিষয়বস্তু মুছে দেবেন। বিজেপি ঘনিষ্ঠ আইনজীবী অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায় জনস্বার্থ মামলা করে আর্জি জানান, জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ সহ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন বিভিন্ন রাজ্যের দ্বারা প্রণীত ধর্ম পরিবর্তনের (লাভ জিহাদ) আইনের সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। আদালতকে তিনি অনুরোধ করেন মুসলিম ও খ্রিস্টানদের কথিত জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণের বিষয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদিও আদালত এদিন অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করেনি। আদালত লাভ জিহাদ আইনের সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে এলাহাবাদ হাইকোর্টে ৫টি, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে ৭টি, গুজরাত হাইকোটে দুটি মামলার উপর শুনানি করবে।
প্রধান বিচারপতি বলেছেণ, লাভ জিহাদ আইনের সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনটি পিটিশন (সিভিল রিট পিটিশন) বিচারাধীন। জমিয়ত উলেমা হিন্দ সহ বিভিন্ন হস্তক্ষেপকারীদের পিটিশনও দায়ের করা হয়েছে, যা আদালত শুনবে। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, পরবর্তী শুনানিতে, আদালত জিহাদের আইনের কিছু বিধানের উপর গুজরাট হাইকোর্ট এবং মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের শুনানি করবে। সমস্ত পিটিশন একত্রিত করা হবে। এটি স্মরণ করা যেতে পারে দেশের পাঁচটি রাজ্য দ্বারা প্রণীত ধর্মান্তর (লাভ জিহাদ) আইনের সাংবিধানিকতাকে ভারতের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের অধীনে গত সপ্তাহে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ চ্যালেঞ্জ করেছিল। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানির নির্দেশে জমিয়ত উলামা লিগ্যাল এইড কমিটির প্রধান গুলজার আজমি একটি নতুন পিটিশন দাখিল করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছে যে আইন তৈরির উদ্দেশ্য আসলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় বিবাহের নিষেধাজ্ঞা ভারতের সংবিধানে প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকেও ক্ষুণ্ণ করে, যা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবেদনে আরও বলা হয়েছে যে এই আইনগুলি ধর্মীয় অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং ভাই-বোনদের মধ্যে ঘৃণা উসকে দেওয়া হয়েছে। তাই রাজ্যগুলিকে এই ধরনের আইন প্রণয়ন থেকে বিরত রাখতে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করুক। আর যে রাজ্যগুলি এই ধরনের আইন করেছে তাদের বাতিল করা উচিত। পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, লাভ জিহাদ আইন তৈরির আরেকটি দিক হল আন্তঃধর্মীয় দম্পতিদের হয়রানি করা যাতে এই ধরনের বিয়ে নিষিদ্ধ করা যায়।
পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, লাভ জিহাদ আইনের অধীনে বিপুল সংখ্যক মুসলমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে ও এখনও তা অব্যাহত। তাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই অসাংবিধানিক আইন বাতিল করা উচিত ও সুপ্রিম কোর্টকে সমস্ত রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া উচিত যাতে তারা এ ধরনের আইন করা থেকে বিরত থাকে। জমিয়ত উলেমা হিন্দের পিটিশনে উত্তরপ্রদেশের আইনানুগ ধর্মান্তর আইন ২০২১, উত্তরাখণ্ডের ধর্মের স্বাধীনতা আইন ২০১৮, হিমাচল প্রদেশের ধর্মের স্বাধীনতা আইন ২০১৯, মধ্যপ্রদেশের ধর্মের স্বাধীনতা আইন ২০২১ ও গুজরাতের ধর্ম আইন ২০২১-এর সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। পরবরতী শুনানি হবে ৩০ জানুয়াির।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct