দারিদ্রতা ও স্বাস্থ্য যে নিবিড়ভাবে যুক্ত সে বিষয়ে সমাজ বিজ্ঞানী, আর্থিনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কোনো সন্দেহ নেয়। উন্নত স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামো প্রদানের জন্যে সময়ের সাথে সাথে অনেক প্রকল্প রূপায়ণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা বেশ প্রশংসিত। কিন্তু এই উন্নত স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার মধ্যেই চোরাবালির মতো বিরাট একটা ভাঙ্গন প্রস্ফুটিত, সেটি হল সিজারিয়ান প্রসব বা সি সেকশন। এই প্রসব মাধ্যমে মুনাফা-লোভী সম্পর্কে সজাগ করেছেন মোঃ সাহিদুল ইসলাম। আজ প্রথম কিস্তি।
দারিদ্রতা ও স্বাস্থ্য যে নিবিড়ভাবে যুক্ত সে বিষয়ে সমাজ বিজ্ঞানী, আর্থিনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কোনো সন্দেহ নেয়। উন্নত স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামো প্রদানের জন্যে সময়ের সাথে সাথে অনেক প্রকল্প রূপায়ণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা বেশ প্রশংসিত। কিন্তু এই উন্নত স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার মধ্যেই চোরাবালির মতো বিরাট একটা ভাঙ্গন প্রস্ফুটিত, সেটি হলো সিজারিয়ান প্রসব বা সি সেকশন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিশু প্রসবের জন্যে সাধারণ জনগণ কে ভয় পূর্বক প্রোৎসাহিত করে অনৈতিক ও মুনাফা-লোভী স্বাস্থ্য-বাণিজ্যকরণের সম্প্রসারণ হচ্ছে, সেটা কিন্তু অগোচর নয়। স্বাস্থ্য-বাণিজ্যকরণের ভূমিকাতে, বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিং হোম গুলি যে পিছনে আছে তা নয় বরং ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী সরকারের সহযোগিতায় তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদন্ড ভঙ্গুর করে দিচ্ছে, আর তার মাশুল আমাদের সমাজ, মূলত মহিলারা দিচ্ছে।
এই বছরের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যা অনুযায়ী, আমাদের বঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে একশো জন শিশুর মধ্যে ৮৪ জন শিশুর জন্ম হচ্ছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে মাত্র ২৬ জন শিশু সিজারিয়ান প্রসব হচ্ছে। সুতরাং, গড়ে আমাদের রাজ্যে সরকার ও বেসরকারি হাসপাতলে প্রায় শতকরা ৪৫ জন শিশু জন্ম নিচ্ছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। কিন্তু আমাদের দেশের গড় সিজারিয়ান শিশু জন্ম হলো ২৩ শতাংশ অর্থাৎ বঙ্গে প্রায় দ্বিগুন শিশু সিজারিয়ান প্রসব। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা অনুযায়ী কোনো দেশে শতকরা ১০ থেকে ১৫ জনশিশুর বেশী সিজারিয়ান প্রসব হওয়া উচিত নয়। সুতরাং, এই সূত্র অনুযায়ী আমাদের রাজ্য যে কত ভয়ঙ্কর জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, সেটা আমরা খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারছি। এই প্রোৎসাহিত মুনাফা-লোভী সিজারিয়ান প্রসবের মূলতঃ দুই ধরণের কুপ্রভাব দেখা যাই ক) স্বাস্থ্যের দিক মহিলা অর্থাৎ একজন “মা” অনেক শারীরিক যন্ত্রনা-কষ্টের স্থায়ী শিকার হতে হয়। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রসব পরবর্তী একজন মা কে অনেক ভুগতে হয়। জরায়ুর স্থান পরিবর্তন হয়ে নেমে আসে, ভিতরে রক্ত ক্ষরণ সহ অন্যান্ন অনেক জটিল দৈহিক সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। প্রসব পরবর্তী অনেক মায়েরা এটা বলে থাকেন যে তাদের শিরদাঁড়া দীর্ঘ একবৎসর কমবেশি প্রতিদিন যন্ত্রনা করে থাকে এবং অনেক অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সুতরাং, আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা, প্রচলিত মহিলা বঞ্চনা-উৎপীড়ণ ও দারিদ্রের শিকারের সাথে সাথে আরেকটা দৈহিক স্থায়ী ব্যাধির শিকার করে দিচ্ছে। এর নজির কম বেশি ধর্ম বর্ণ ও আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে সব শ্রেণীর পরিবারে দেখা যায়। আমরা হয়তো খুব সহজেই একজন মহিলাকে একটা ‘বাচ্চা-উৎপাদক’ যন্ত্র হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছি যেখানে “মানবিকতা” নামক মহৎ গুণটি মুনাফার কাছে বশ্যতা শিকার করেছে।
লেখক গবেষক, ইনস্টিটিউট অফ রুরাল ম্যানেজমেন্ট আনন্দ, গুজরাত
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct