সৌদামিনীর সংসার
শংকর সাহা
আজ গুণে গুণে প্রায় পনেরোটি বছর হয়ে গলে সৌদামিনীর এসংসারে বিয়ে হয়ে আসা। বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই যেন সৌদমিনীর এ চেনাজগতটা ক্রমশঃ পাল্টে যেতে থাকে। গ্রামের এক পুরোত ঠাকুরের মেয়ে সৌদামিনী। অভাবের সংসারে যেন তখন শান্তি ছিল কিন্ত আজ বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হয়ে এসেও যেন সৌদামিনীর মনের সুখপাখীটি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। সৌদামিনীর বাবামা মেয়েকে আদর করে শুধুই মিনী বলে ডাকছেন। ছোটো থেকেই এক সংস্কারে মানুষ হয়েছে সৌদামিনী। এবাড়িতে যখন বিয়ে হয়ে আসেন সৌদামিনী তখন নিজের বলতে শুধুই ছিলেন তার শ্বশুরবাড়ি। তিনিই সৌদামিনীকে পছন্দ করে পুত্রবধূ করে আনেন। কিন্তু এবাড়ির সকলে সৌদামিনীকে পছন্দ করতেননা কারণ সে তো গ্রামের গরীব পুরুত ঠাকুরের মেয়ে। বিয়ের পরের বছরই শ্বশুর মারা যান। প্রায় এসংসারে একা হয়ে যান সৌদামিনী ।বছর না ঘুরতেই সৌদামিনী মা হন। আজ সে ফটিকের মা। আজ ছেলেকে নিয়ে সৌদার যেন বেঁচে থাকা।
ফটিক শহরের বড় স্কুলে পড়ে। বেসরকারী নামজাদা স্কুলে না পড়ালে এবাড়ির অভিজাত্য যে বজায় থাকবেনা! ফটিক পড়াশোনায় খুব ভালো। বাড়ির সবকাজ সেরে রাতে ছেলেকে পড়া দেখাতে বসে সৌদামিনী। আজ ফটিকের মাধ্যমিকের রেজাল্ট। বাড়ির সবাই সকাল থেকেই টিভির সামনে সে আছে। ঠাকুর ঘরে সৌদামিনী উপোস থেকে পুজো দিচ্ছেন ছেলের। হঠাতৎ টিভিতে সকাল নটার খবরে ঘোষিত হল এবারের মাধ্যমিকে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম স্থান পেয়েছে ফটিক মানে অর্কদ্বীপ আচার্য্য, সৌদারমিনীর সন্তান। নীচ থেকে কাজের মেয়ে পুঁটি ঠকুর ঘরে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে, “ওগো বৌদিমনী,ছোটোবাবু ফাস্ট হয়েছে গো ।চলো চলো নীচে চলো?” ঠাকুরকে প্রণাম করে পুজোর ফুল নিয়ে নীচে আসে সৌদামিনী। মুহুতের মধ্যে বাড়ি ভরে যায় সমস্ত টিভি সাংবাদিকদের ভিড়। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে সৌদামিনী দেখে, ফটিককে পাশে বসিয়ে শাশুড়ী মোক্ষদাদেবী সাক্ষাকর দিচ্ছেন আর বারেবারে বলছেন এ আমার নাতি এবাড়ির গর্ব। সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে পড়ে সে। ছেলের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে সে। হঠাতৎ ফটিকের নজরে আসে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন তার মা। মায়ের হাত ধরে এগিয়ে এনে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ফটিক বলে,” ইনি আমার মা। আজকের আমার এই সাফল্যে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার মা “ সৌদামিনীর চোখটি অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। পাশ থেকে শাশুড়ী মোক্ষদাদেবী বলে ওঠেন,” আমার বউমার মতন যেন সব মা হন তবেই তো প্রতিঘরে এমন ফটিক জন্মাবে। “ সকলের করতালিতে যেন ভরে ওঠে গাঙ্গুলীবাড়ি। পাড়ার সবাই আসে সৌদামিনীকে ধন্যবাদজ্ঞাপন করতে। সৌদামিনী অবাকবিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে শাশুড়ীর দিকে। বিয়ের পর হয়তো এইপ্রথম ওনার হাতে আর্শীবাদ পেলেন তিনি। অজিতেশ, সৌদামিনীর স্বামী তখন দূরে দাঁড়িয়ে একভাবে চেয়ে আছে সৌদামিনীর দিকে..
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct