মস্কোর অযাচিত আগ্রাসনের জবাবে জো বাইডেনের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান ও তৎপরতা মার্কিন রাজনীতির চিত্তাকর্ষক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। মধ্যবর্তী নির্বচনে ঘুরেফিরে আসে ইউক্রেন যুদ্ধে বাইডেনের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বছরের পর বছর ধরে সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে লড়াই চালিয়ে আসছেন, তার উত্তাপ এসে লাগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে। ২০২৩ সালে এই উত্তাপ-উত্তেজনা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এ নিয়ে লিখেছেন স্টিফেন কলিনসন। আজ প্রথম কিস্তি।
কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে মধ্যবর্তী নির্বাচন (মিডটার্ম ইলেকশন)। এই নির্বাচনে আশানুরূপ ফলাফল লাভ করতে না পারলেও প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে রিপাবলিকান পার্টি। অন্যদিকে ‘লাল ঢেউ (রিপাবলিকান পার্টির বিপুল ব্যবধানে বিজয়লাভ)’ বয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে ঘটেনি তেমনটা। অর্থাত্, ভরাডুবির আশঙ্কা সত্ত্বেও প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি। অভূতপূর্বভাবে সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আমেরিকায় কী চলছে, তা অজানা নয় কারো। বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যার তদন্ত চলছে। এমন একটি মুহূর্ত মার্কিন জাতিকে কিছুটা হলেও বিচ্ছিন্ন করেছে—এ কথা বলাই যায়। সামনের দিনে এই বিচ্ছিন্নতা আরো বাড়তে পারে—এই যুক্তিও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এসবের মধ্যে আছে বিশ্লেষকদের আশঙ্কাবাণী। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘ক্রান্তিকাল পার করছে মার্কিন গণতন্ত্র। আগামী দিনগুলোতেও গুরুতর চাপের মধ্যে থাকবে আমেরিকার রাজনীতি।’ এসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইতিমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ইলেকশনের প্রচারণা। ক্ষমতা ধরে রাখা ও ক্ষমতার চেয়ারে বসতে চাওয়া—দুই দলের এই লড়াইয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে উত্তেজনা আছড়ে পড়ছে পুরো দেশে। আলোচনা আছে দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যত্ নিয়েও। মোট কথা, ২০২৩ সাল জুড়ে বিভিন্ন ইস্যু ঘুরেফিরে আসবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে। আর স্বাভাবিকভাবেই একে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে বিশ্বরাজনীতি।
২০২২ ছিল উত্তাল ও বিপজ্জনক একটি বছর। বছরটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্যই হয়ে ওঠে ‘বিপজ্জনক’। গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে দেখা গেছে, বৈশ্বিক বিভিন্ন ঘটনা কীভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাবক হয়ে ওঠে। মস্কোর অযাচিত আগ্রাসনের জবাবে জো বাইডেনের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান ও তৎপরতা মার্কিন রাজনীতির চিত্তাকর্ষক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। মধ্যবর্তী নির্বচনে ঘুরেফিরে আসে ইউক্রেন যুদ্ধে বাইডেনের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বছরের পর বছর ধরে সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে লড়াই চালিয়ে আসছেন, তার উত্তাপ এসে লাগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে। ২০২৩ সালে এই উত্তাপ-উত্তেজনা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই দেখার বিষয়। ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানো যায়নি। বরং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মোড় নিচ্ছে এই সংঘাত। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দৃঢ়-অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন—রাশিয়ান বাহিনীকে ইউক্রেনের মাটি থেকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত থামবে না ইউক্রেন। অন্যদিকে পিছু না হঠার প্রত্যয় এসেছে যুদ্ধবাজ পুতিনের কাছ থেকে। এই অবস্থায় রাশিয়া ও তার বন্ধুদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পালটাপালটি অবস্থান বিশ্বকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়, তাই বড় প্রশ্ন। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মকভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে ন্যাটো। এই যখন অবস্থা, তখন রাশিয়া-ন্যাটো সংঘর্ষ বন্ধ করার জন্য বাইডেন কী উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্বের মানুষ।
লেখক সিএনএনের হোয়াইট হাউজ প্রতিনিধি
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct