ছুটির মজা
গোলাম মোস্তাফা মুনু
মবিনুল ইসলাম হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। নবম শ্রেণিতে। সে পড়াশোনায় খুব ভালো। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। ভালো রেজাল্ট করতে হবে তাই সে বহুদিন থেকে বাড়ি যায়নি। মাঝে মাঝে তার খুব ইচ্ছা করে বাড়ি যাওয়ার। কিন্তু পড়াশোনার কথা ভেবেই মনের ইচ্ছাকে সে চাপা দিয়ে রাখে। একদিন তো এক শিক্ষক মহাশয় মবিনুলকে বলেই ফেলেন, ‘মবিনুল, তুমি অনেকদিন থেকে বাড়ি যাওনি। একবার তুমি বাড়ি থেকে ঘুরে এসো। তোমার মনটাও ভালো করবে। তোমার পড়ার সাথীরা দুবার তিনবার করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। তোমার কি যাওয়ার ইচ্ছা হয় না?’ মবিনুল শান্ত স্বরে বলে, ‘ইচ্ছা হয় স্যার, খুবই ইচ্ছা হয়। কিন্তু...!’ মবিনুল আরও কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু শিক্ষক মহাশয় মবিনুলের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘কিন্তু আবার কী! তোমার পড়াশোনাতে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। তোমার রেজাল্ট ভালই হবে। তুমি একবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসো।’ মবিনুল একই রকম সুরে বলে, ‘না স্যার, এখন যাবো না। একদিন-দুদিনে মন ভরবে না। আমার পাড়ার বেশ কিছু ছেলে আছে, যারা আমাকে খুবই ভালোবাসে। দাদু সম্পর্কের মানুষগুলোও আমাকে খুব স্নেহ করে। আমি বাড়ি গেলে তারা আমাকে দেখতে আসে আমাদের বাড়ি। আমিও তাদের বাড়ি যাই তাদের সঙ্গে গল্প করতে। আর আমার চাচাতো ভাই বোনেরা তো সব সময় আমার কাছেই থাকে। পরীক্ষার শেষে দশ-বারো দিন ছুটি পাওয়া যাবে। তখন বাড়ি যাবো। বাড়ি গিয়ে বেশ মজা করে ছুটি কাটাবো।’ শিক্ষক মহাশয় মবিনুলের পিঠে হাত রেখে বলেন, ‘ঠিক আছে মবিনুল, পরীক্ষা শেষ করেই বাড়ি যেও। এখন আরও মন দিয়ে পড়াশোনা করো। মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পুঁজি হলো শিক্ষা অর্জন করা। শিক্ষার বিষয়ে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও খুব গুরুত্ব দিয়েছেন।’ এ বলে শিক্ষক মহাশয় শিক্ষক কক্ষের দিকে চলে যান।
মাস দেড়েক পর। মবিনুলের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। আগামীকাল সকল ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে যাবে। তারা দশ-বারো দিন বাড়িতে থাকতে পাবে। তাই সবাই খুব খুশি। খুশি মবিনুলও। সেই রাতটা মবিনুুুুলের ভালো করে ঘুম হলো না। খুশিতে। পরেরদিন। দুপুরবেলা। মবিনুল বাড়ি পৌঁছায়। তার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। মায়ের কাছে খাবার খেতে চায়। মা উত্তরে বলে, ‘আজকে দুপুরের রান্না করিনি।’মবিনুল মৃদু কন্ঠে মাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘কেন রান্না করোনি মা?’ ‘আজকে একটু পরেই তোর নানির বাড়ি বেড়াতে যাবো। সকালের তৈরি করা দু-তিনটা রুটি আছে। সেগুলো খেয়ে নে।’ মবিনুল পূর্বের ন্যায় সুরেই জিজ্ঞাসা করে, ‘বাবা বাড়িতে নেই?’ ‘নেই বলেই তো বেড়াতে যাচ্ছি। তোর বাবা আট-দশদিন পর বাড়ি ফিরবে। তখন আমরাও চলে আসবো।’ ‘আমি আজকে হোস্টেল থেকে বাড়ি আসবো, এ খবর তুমি জানতে না মা?’ ‘হ্যাঁ, জানতাম।’ ‘তারপরেও তুমি...! ঠিক আছে মা, তুমি যাচ্ছো যাও। কিন্তু কে আমাকে রান্না করে খাওয়াবে?’ ‘আমি অতশত বলতে পারবো না। তোর অসুবিধা হলে তুইও নিজের নানির বাড়ি চলে যা। আট-দশদিন থেকে আয়।’ এ বলে মবিনুলের সৎমা নিজের ছয় বছরের মেয়ের মাথায় চিরুনি দিতে শুরু করে। মবিনুল মনে খুব কষ্ট পায়। তখনও তার পিঠে ব্যাগ রয়েছে। সেখানে সে বেশ কিছুক্ষণ নীচে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে। কী যেন ভাবে। খানিক পর মাকে বলে, ‘মা, আমি নিজের নানির বাড়ি চললাম। বাবা বাড়ি ফিরলে ওকে জানিয়ে দিও। নানির বাড়ি থেকেই আমি আবার হোস্টেলে চলে যাবো।’ এ বলে মবিনুল কয়েক ফোটা চোখের জল মুছে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct