আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে উঠেছেন, প্রতিবাদী হন পথে নামুন, প্রতিবাদেই পারে বাঁচাতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যায়তন থেকে অচলায়তনে পরিণত হয়েছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যতটা দুরবস্থা হতে পারে আলিয়া এখন সেই পর্যায়ে। এই সমস্যা এক-দু দিনের নয়, দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জিভূত সমস্যা। দীর্ঘদিনের জমা হওয়া শ্যাওলা যেমন নদীর গতিপথ বন্ধ করে দেয়। আলিয়ার সমস্যা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইউ. জি. সির প্রতিনিধি দল ১২ বি অনুমোদন দিতে ভিজিট করে ২০১৮ সালে তারপর তিন বছরের মধ্যে ন্যাক ভিজিট করানোর নির্দেশ দিয়ে যান। সেই নির্দেশের চার বছর পার হয়ে গেলো। আমরা দেখেছি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে ন্যাক ভিজিট না করায়, ইউজিসি তাঁদের অনুমোদন বাতিল করেছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কি ইউজিসি অনুমোদন বাতিলের পথে হাটছে? আলিয়ার সমসাময়িক ও পরবর্তীতে গড়ে উঠা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাক ভিজিট বাকি নেই। অভিযোগ উঠছে দীর্ঘ তিন বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উন্নয়ণ হয়নি। দেওয়া হয়নি দপ্তরের পক্ষ থেকে উন্নয়ণ বাবদ প্রাপ্য টাকাও।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শ্রীবৃদ্ধির জায়গা তার গবেষণা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২ বছর ধরে পিএইচডি গবেষণায় ভর্তি বন্ধ হয়ে আছে। আলিয়ার অনেক ছাত্র-ছাত্রীর জে আর এফ এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ গবেষণায় সুযোগ পাচ্ছেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে ২৮০ জনের শিক্ষক পদ তৈরি হয়। তারমধ্যে এই পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৯০ জনের মত। এখনও ৯০ টি শুন্যপদে নিয়োগ বাকি। বঞ্চিত শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষাকর্মী, বেহাল দশা শিক্ষার। বিল্ডিং পরিকাঠামোর অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারছেনা সোশ্যাল সায়েন্স এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন, দর্শন, সমাজবিদ্যা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয় বিগত এক বছর ধরে আর একটি সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, হোস্টেলের জমি হস্তান্তর কেন্দ্রিক বিবাদ। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মোট পড়ুয়া প্রায় সাত হাজার সেখানে হোস্টেলের সুযোগ পায় প্রায় ১৩০০ মত শিক্ষার্থী। পার্কসার্কাস ও তালতলা ক্যাম্পাসের জন্য কোনো হোস্টেল ও খেলার মাঠ নেই। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ভর্তি হয় প্রান্তিক জেলার দরিদ্র মেধাবী সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা। তাহলে এদের হোস্টল থেকে বঞ্চিত করে কি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছেনা? ২০১৬ সাল থেকে ওই জমিতে প্রস্তাবিত পরিকাঠাকো গড়ে তোলার জন্য দফায় দফায় আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব গেছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কেন নিজেদের জমি অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেবে? যদি একান্তই দিতেই হয়, তা আলোচনার মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হক। প্রয়োজনে নিউটাউনে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও ১০ বিঘা জমি বরাদ্দ করতে রাজ্যসরকার উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়িত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর একটি অন্যতম সমস্যা এই মূহুর্তে নেই পূর্ণ সময়ের উপাচার্য। দীর্ঘ ন’ মাস ধরে একজন আংশিককালীন সময়ের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। তিনি মাদ্রাসা প্রেসিডেন্ট পদেই আছেন। যদিও বর্তমান উপাচার্যের একাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তিনি প্রফেসর নন, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তারপরেও তিনি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য? প্রাক্তন উপাচার্যের অবসরের দীর্ঘ ১০ মাস হয়ে গেলেও এখনও নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য গঠিত হয়নি কোনো সার্চিং কমিটি।
দীর্ঘদিন ধরে অজস্র সমস্যায় জর্জরিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে সমস্যা নিরসনে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই সরকারের। অথচ এই সরকার সংখ্যালঘুদের ভোটেই ক্ষমতায় বসেছেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষানুরাগী, সংখ্যালঘু দরদী মানুষজনকে এগিয়ে আসতে হবে, প্রয়োজনে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, পথে নামতে হবে। নাহলে বাঁচানো যাবেনা সংখ্যালঘু সমাজের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান এই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে। কেনোনা এখানে রক্ষকেই ভক্ষক হয়ে উঠেছে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন বৃত্ত নিগমের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সংখ্যালঘু দফতরের প্রধান সচিব মহঃ গোলাম আলী আনসারী। এই আধিকারিক আবার মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংখ্যালঘু কল্যাণে পূর্ণ দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রী হচ্ছেন গোলাম রাব্বানী। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আজও কনভোকেশন হয়নি। নানান সমস্যার সমাধান করতে মাননীয় উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে আসুন। সবাই তাকিয়ে রয়েছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে যারা ষড়যন্ত্র করছেন তাদের পতন সুনিশ্চিত শুধু সময়ের অপেক্ষা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সরকার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে কাজ না করলে সাধারণ মানুষ ভোটব্যাংকের হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে অন্য ইতিহাস রচনা করতে দ্বিধা করবেন না। এখনো সময় আছে সাধু সাবধান। বাঙালি মুসলমান সমাজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে উর্দু ভাষার কয়েকজন গায়ে মানে না আপনে মোড়লীদের ছুড়ে ফেলতে সময় লাগবে না। বাঙালি মুসলমান সমাজের আধুনিক শিক্ষা প্রসার ঘটাতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গতি সচল রাখতে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজন হলে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আবারও সংখ্যালঘু দফতর নিজের হাতে তুলে নিয়ে উন্নয়ন করতে সঠিক পদক্ষেপ নিক।
ইতি, বিনীত
ফারুক আহমেদ
সাধারণ সম্পাদক, সর্বভারতীয় নবচেতনা
ঘটকপুকুর, ভাঙড়, গোবিন্দপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা-৭৪৩৫০২
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct