নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: প্রায় এক বছর ধরে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার আটকে রেখে দিয়েছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা। তার জেরে কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের গ্রামীণ এলাকার মানুষ। বাংলার ছবিটাও আলাদা কিছু নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার সরব হয়েছেন এই বকেয়া টাকা যাতে কেন্দ্র সরকার দিয়ে দেয় তার জন্য। যদিও সেই প্রকল্পে এখনও হাত উপুড় করেনি মোদি সরকার। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে যাতে বাংলার মানুষ খুব দুর্ভোগের মুখে না পড়েন তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দফতরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের শূণ্যস্থান রাজ্য সরকারের ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের মাধ্যমে পূরণ করতে। কার্যত কোভিড পরবর্তীকালে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এই ভাবেই সচেষ্ট হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তার জেরেই এখন দেখা যাচ্ছে, ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ কোটি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে বাংলার বুকে। আর তাতে কাজ পেয়েছেন ৪৮ হাজার কৃষক পরিবারের লোকজন।১০০ দিনের শূন্যস্থান পূরণ মমতার ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে
মূলত অনুর্বর বা এক ফসলি জমিকে বহু ফসলি জমিতে পরিণত করে মানুষের আয়বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২০ সালে ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্প চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেহেতু ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কেন্দ্র সরকার টাকা দিচ্ছে না তাই ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে গ্রাম বাংলার মানুষকে কাজ দিতে এই প্রকল্পকে কাজে লাগানোর কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার জেরেই এই প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে জমিগুলি বহু ফসলিতে পরিণত হয়েছে। আগামী দিনে আরও অন্তত পাঁচ হাজার একর জমি এই প্রকল্পের আওতায় আনার রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। মূলত বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান এবং ঝাড়গ্রামের মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে এই প্রকল্পের কাজ চলছে।উল্লেখ্য ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে বাংলার বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। সেই প্রকল্পের টাকা না আসায় যাতে আমজনতার ওপর ধাক্কা নেমে না আসে তার জন্যই রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের নিজস্ব প্রকল্পেই অদক্ষ শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রায় ৪২ লক্ষ ৫ হাজার মানুষ কাজ পেয়েছেন। গত বছর মে মাসের মধ্যেই প্রায় ৭৩.৬৬ লক্ষের বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। নির্দিষ্টভাবে মোট ৫,৪৫৫টি জায়গা চিহ্নিত করে ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিকাজের উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য। কৃষি, ক্ষুদ্র সেচ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন, পশুপালন এবং মৎস্য দপ্তরের সমন্বয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে রাজ্য।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct