মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: বর্ধমান রাজ পরিবার পাঠান যুগে পাঠানদের ,মুঘল যুগে মুঘলদের ও ইংরেজ আমলে ব্রিটিশদের খাস ব্যক্তি হিসাবে কাজ করেছেন ।ইংরেজ আমলে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান রাজ একটি প্রমদ কানন তৈরি করার জন্য গোলাপবাগ ,ভেরি খানা ,তারা বাগ ,ইত্যাদির জায়গা থেকে স্থানীয় মুসলিম জনগণকে উচ্ছেদ করে কমলসাগর পুকুরের পাড়ে তুলে আনেন। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে কমলসাগর পাড়াতে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেন । মসজিদের ভেতরে ফলকে ছত্রে ছত্রে এই কাহিনী উল্লেখ করা আছে। এছাড়াও কমলসাগর মসজিদের হান্ডি অর্থাৎ তামার হাঁড়িতে পুরো ঘটনা লিপিবদ্ধ করা ছিল। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে গোলাপবাগ এলাকা মুসলিম শূন্য হয়ে গেল। বর্ধমান রাজের প্রমদ কানন তৈরি হল। সমস্ত জায়গা রাজা দখল করে নিলেন শুধু ঐ এলাকায় একটি মসজিদ পড়ে রইল এবং ধীরে ধীরে মসজিদটি জরাজীর্ণ হয়ে একসময় বয়সের ভারে ও বিভিন্ন ধরনের উৎপাতে ভেঙে পড়ে।
ভেঙ্গে পড়া মসজিদটি বাদ দিয়ে সমস্ত জায়গা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় দখল করে নেয়। মসজিদটির পূর্বে একটি পীরতলা ও কবরস্থান আজও বিদ্যমান এছাড়াও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বহু কবর ও পিরস্থান দেখতে পাওয়া যায়। যা আজও বিদ্যমান। এই ভাঙ্গা মসজিদটিকে এলাকার মানুষজন হাজীপোতা মসজিদ বলে অভিহিত করতেন । হাজীপোতা নামের পিছনের রহস্য খুঁজতে যেয়ে দেখলাম এই মসজিদের পিছনেই “হাজী শরীফ শাহ” নামক একজন ওলির মাজার আছে। হাজী সাহেবের মাজার অর্থাৎ কবর থাকায় পূর্ববঙ্গ থেকে আসা দলে দলে উদ্বাস্তু চারিদিকে বসবাস করার ফলে তাদের মুখ থেকে অপভ্রংশ হয়ে “হাজী পোতা”অর্থাৎ হাজির কবর বা হাজিকে পুঁতে রাখা হয়েছে এমন জায়গা হাজী পোতা হয়ে যায়। এবং তার থেকেই হাজীপোতা এলাকার নাম হয়েছে বলেই অনুমান। ১৯ ৮০ সালের মসজিদের প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে খড়ের চাল ও ছিঁটে বেড়া দিয়ে নামাজ চালু হয়।১৯৮৪- ৮৫ খ্রিস্টাব্দে মাননীয় জনাব বোরহান কাজী এলাকার সম্ভ্রান্ত কাঠ ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী খাগড়া গড়ে বসবাস করতেন আদিবাড়ী খেতিয়া গ্রামে, তিনি উদ্যোগ নিয়ে প্রাচীন ভিতের ওপর নতুন মসজিদের কাজ শুরু করেন। ২০১০ সাল থেকে নতুন উদ্যোগে এলাকার মানুষজন ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্যোগে মসজিদের কাজ নতুনভাবে শুরু হয়। ২০২২-এ মসজিদের আমূল সংস্কার করা হয়। এবং বর্তমানে কিছু কাজ এখনো বাকি আছে যা চলছে। মসজিদের নামে বহু সম্পত্তি থাকলেও সব বেদখল হয়ে গেছে । অসাধু ল্যান্ড অফিসাররা পয়সার বিনিময়ে তাদের নামে করে দিয়েছে ।কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও যত মসজিদ চালাতে খুবই বেগ পেতে হচ্ছে ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct