আজিম শেখ, বীরভূম, আপনজন: তারা ইটভাটার শ্রমিক। আমরা যখন শীতকালে মোটা ও নরম পশমের পোশাক পরে শীত উপভোগ করি তখন এই মানুষগুলো অত্যন্ত ঠান্ডার মধ্য দিয়ে ইট কাটার সরঞ্জাম তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে ইট কাটার জন্য মাটি ভিজিয়ে রাখে। তারপর সারারাত ধরে সেই মাটিকে ইটের জন্য তৈরি করে। লকডাউনে কর্মহীন ছিল বীরভূম জেলার মুরারই থানার শেফানি রাজবংশী, অজয় ভুইমালি, গোপাল ভুইমালি, সাদের সেখ সহ আরো ৪০ জন শ্রমিক। কাজের খোঁজে পাড়ি দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর থানার ইটভাটাগুলিতে। পুজোর আগে মালিকপক্ষের কাছ থেকে তারা টাকা চায়। তাদের কাজের সর্বমোট তিন লক্ষ বত্রিশ হাজার টাকা হয়। মালিক তাদের ৫৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে কিন্তু বাকি থেকে যায় ২ লক্ষ ৭৪০০০ টাকা। মালিক তাদের বলেছিল কিছুদিন পর সঠিক সময়ে টাকা দিব কিন্তু বহু মাস কেটে গেলেও কোনোভাবেই আর টাকা পাচ্ছিলেন না শ্রমিকরা। এদিকে টাকা না পেয়ে শ্রমিকরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। মানুষগুলো প্রত্যেকেই তপশিলি জাতি সম্প্রদায়ের। এরা মূলত ইট ভাটাতে ও বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে। অভিযোগ, বারবার মালিক তাদের খালি হাতে ফেরত পাঠিয়েছে। এদিকে মালিক মুর্শিদাবাদ ছেড়ে গিয়ে কলকাতায় বসে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছিলেন। শ্রমিকরা ফোনে যোগাযোগ করলেও যোগাযোগ করা যেত না। অসহায় শ্রমিকদের কথা শোনার মত কেউ নেই। এরপরশ্রমিকদের পরিবার বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সাথে যোগাযোগ করে । বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি অধ্যাপক সামিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কাজ শুরু করেন সহযোদ্ধা মোহাম্মদ রিপন। তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লেবার দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সমস্যাটির সমাধান করার জন্য। উপরমহলের নির্দেশ পেয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার লেবার কমিশন ঠিকাদারের কর্মক্ষেত্রের উপর কড়া নির্দেশ জারি করেন ও শ্রমিকদের কাছ থেকে অভিযোগপত্র জমা নিয়েছেন। লেবার কমিশনের অফিসে মালিকপক্ষের লোকজন এসে ক্ষমা চান এবং স্বীকার করে যে শ্রমিকরা তাদের কাছ থেকে টাকা পাবে। মালিক পক্ষের লোকজন জানিয়েছেন কিস্তিতে টাকা দিয়ে সমস্ত টাকা পরিশোধ করে দেব।
শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সাদেক সেখ, অজয় ফুলমালি জানান, আমরা শ্রমিক কাজ করি কিন্তু যোগ্য সম্মান পায় না। আমাদের কাজ করিয়ে নিয়ে অনেক সময় ঠকানো হয়। আমরা আমাদের প্রাপ্য মজুরি পায় না। আমাদের কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কাউকে পাশে পাই না। আমরা বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের রাজ্য সভাপতি অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম ও সদস্য মোহাম্মদ রিপন কাছে কৃতজ্ঞ। উনি আমাদের সর্বত্রভাবে সহযোগিতা করেছেন। মোঃ রিপন লেবার কমিশন কে দিয়ে আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। তিনি বহু জায়গায় আমাদের জন্য গেছেন , যাতে আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পাই। পরিশেষে মোহাম্মদ রিপন জানান, আমরা চাই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার একটি নির্দিষ্ট দপ্তর চালু করুক। মাইগ্রেশন বন্ধ করার জন্য কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করুক। শ্রমিকরা যাতে নিজ এলাকায় কাজ পায় সরকার তার পরিকল্পনা গ্রহণ করুক। এছাড়া প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকাতে একটি করে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য হেল্প লাইন সেন্টার চালু করা হোক যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা কোথাও বিপদে পড়লে সরাসরি সেই হেল্পলাইনে ফোন করে সহযোগিতা পায়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct