রাতুল ও শালিক ছানা
আহমাদ কাউসার
খুব ভোরে রাতুলের ঘুম ভেঙে যায়। টিনের চালে টপ টপা টপ শিশির পড়ছে,বাহিরে প্রচন্ড শীত। চারিদিকে সাদা কুয়াশা। লেপের নিচের মজার ওম ছেড়ে উঠতে মন চায়না। লেপ মুড়িয়ে শোয়ে আছে। হঠাৎ বাহির থেকে চিক চিক একটা শব্দ আসছে। রাতুল ভাবলো হয়তো চিকায় ডাকছে। একটু পরে আবার চিক চিক শব্দ, আরো জোরে,থামছেই না।কিসের শব্দ তা দেখতে রাতুল দরজা খুলে বাহিরে গেল। চারিদিকে কুয়াশা দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। চিক চিক ডাকটা কোথায় হচ্ছে তা খেয়াল করে শোনার চেষ্টা করছে। উঠোনের এপাশ ওপাশ দেখতে লাগলো। হঠাৎ উঠোনোর কোনে বরই গাছের নিচে দেখতে পেল, দুটো শালিকের ছানা পড়ে আছে,শীতে কাঁপছে, আর চিক চিক ডাকছে। রাতুল ছানা দুটোকে রান্না ঘরে নিয়ে গেল। রাতুল চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলে স্যারের কাছে পাখি কীভাবে আমাদের উপকার করে তা শুনেছে। রাতুল তার বাবার কাছে শুনেছে,পাখিরা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শালিক আমাদের অনেক উপকার করে। জমির ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খায়। এই শালিক একসময় রাড়ির উঠোনে,জমিতে খুটে খুটে আহার করতো। এখন এই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো গাছের ডালে কিংবা জমিতে শালিক দেখা যায় না। ছানা দুটোকে দেখে রাতুলের বাবার এ কথাগুলো মনে পড়ে গেল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল এগুলোকে লালন পালন করে বড় করবে। রাতুল তার মাকে ছানা দুটো দেখাল। ছানা দুটোকে সে লালন পালন করে বড় করবে তা তার মাকে জানাল। রাতুলের মা রাতুলে ইচ্ছের কথা শুনে খুশি হলো এবং রাতুলকে এ ব্যাপারে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিল। মা’র প্রতিশ্রুতি পেয়ে রাতুলের উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। ছানা গুলো কাঁপছে দেখে রাতুলের মা রাতুলকে বললো,’ছানাগুলোর ওমের দরকার,আমি খড়কুটো দিয়ে একটা বাসা বানিয়ে দেই। তুই চালের খুদ নিয়ে আয়, এগুলোর পেটে খিদে খবার দিতে হবে’।
রাতুল খুূদ এনে দিল,মার তৈরি বাসায় ওম পেয়ে ছানাগুলো চিৎকার বন্ধ করে দিলে। কয়েকদিন পর রাতুল ছানাগুলোর জন্য একটি খাচা তৈরি করলো। শীত হতে ছানাগুলো রক্ষা করতে খাচার তিতর খড়কুটো প্যাচিয়ে দিল। প্রতিদিন রাতুল ছানাগুলোর যত্ন নিতে লাগলো। ধীরে ধীরে ছানাগুলো বড় হতে লাগলো। একমাস পর ছানাগুলো উড়াল দেওয়া শিখে গেল। বাতুলের বাবা শহর থেকে বাড়িতে আসলো,তিনি শহরে চাকুরি করেন। প্রতিমাসে উনি বাড়িতে আসেন। পাখির প্রতি রাতুলের ভালোবাসা দেখে খুশি হলেন। রাতুলের বাবাও পাখি খুব ভালোবাসে। রাতুলের বাবা রাতুলকে বললো,’তোমার পাখিগুলোতো এখন উড়াল দিতে পারে। এগুলোকে এখন খাচা থেকে ছেড়ে দাও’। বাবার এমন কথা শুনে রাতুলের মনটা খারাপ হয়ে গেল। রাতুল বাবাকে বললো,’না বাবা এগুলো খাচাতেই থাকুক। আমি পাখিগুলোকে এখানেই রাখতে চাই’। বাবা বললো,’দেখ রাতুল,যার যেখানে স্হান তাকে সেখানে রাখাই ভালো। সেখানেই সে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। খাচা পাখির উপযুক্ত বাসস্হান নয়। পাখির বাসস্হান গাছগাছালি বন জঙ্গল। তোমাকে যদি বনে রেখে দেওয়া হয়,তুমি বনে থাকতে পারবেনা,কারণ বন তোমার উপযুক্ত বাসস্হান নয়। ঐখানে তোমাকে একা লাগবে,ভয় পাবে। অনুরূপভাবে খাচাতেও পাখিগুলো একাকীত্ব বোধ করছে, ভয় পাচ্ছে। তাছাড়া শালিক এখন বিলুপ্তির পথে। এই প্রজাতিটি রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের’। বাবার কথা শুনে রাতুল পাখিগুলো ছেড়ে দিল। পাখিগুলো খাচা থেকে মুক্ত হয়ে ডানা মেলে উড়ে গেলে বনের দিকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct