২০২২ সাল শেষেও বিশ্বের যে ক’টি অঞ্চলে অস্থির পরিস্থিতি বজায় থাকার ইঙ্গিত রয়েছে তার মধ্যে একটি হল মধ্যপ্রাচ্য। এই অঞ্চলে বিশ শতকের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে যে ভারসাম্য ছিল তা ভেঙে পড়ে নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকে। দ্বিতীয় দশকে সম্পর্কের নতুন সমীকরণ তৈরি হতে থাকে। তৃতীয় দশকের প্রথম দুই বছর ছিল নতুন এক মধ্যপ্রাচ্যের ভিত্তি তৈরির সময়। ২০২৩ সাল এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন এক সময়কালের সূচনার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে। এ নিয়ে লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ প্রথম কিস্তি।
২০২২ সাল শেষেও বিশ্বের যে ক’টি অঞ্চলে অস্থির পরিস্থিতি বজায় থাকার ইঙ্গিত রয়েছে তার মধ্যে একটি হল মধ্যপ্রাচ্য। এই অঞ্চলে বিশ শতকের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে যে ভারসাম্য ছিল তা ভেঙে পড়ে নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকে। দ্বিতীয় দশকে সম্পর্কের নতুন সমীকরণ তৈরি হতে থাকে। তৃতীয় দশকের প্রথম দুই বছর ছিল নতুন এক মধ্যপ্রাচ্যের ভিত্তি তৈরির সময়। ২০২৩ সাল এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন এক সময়কালের সূচনার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে।নতুন বছরের শুরুতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কট্টরপন্থী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি পশ্চিম তীর ও জেরুসালেমকে ইহুদিকরণের যে প্রক্রিয়া আগের শাসনের সময় শুরু করেছিলেন সেটিকে আরো এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জর্দানের বাদশাহ ব্যতিক্রমীভাবে ইসরাইলের এই নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন যাতে ওআইসি তার পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত তুরস্কে চ্যালেঞ্জমুখর নির্বাচন এই বছরের মাঝামাঝি। সৌদি আরবে মুহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা গ্রহণের জন্য ২০২৩ হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ বছর। লিবিয়া ঐক্যবদ্ধ দেশ থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই সালটি হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সিরিয়ায় শান্তি ও স্থিতি আর শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে ২০২৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে। ইরানের সাথে উপসাগরীয় দেশগুলো এবং তুরস্কের সম্পর্কে যে উত্তেজনা ও টানাপড়েন রয়েছে তার মধ্যে একটি নতুন মেরুকরণও হতে পারে এই সময়ে। এর বাইরে মিসর ইয়েমেন লেবানন তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন এক পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে এ সময়। লিবিয়ার ঐক্যের শেষ সুযোগ
২০২০ সালে লিবিয়ার যুদ্ধবিরতির পর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, দেশটির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রশাসনের মধ্যে বিভাজন এখনো শক্তিশালী হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে চলমান জাতীয় বিভাজন এবং পরবর্তী মতবিরোধের কারণে ‘আসন্ন নির্বাচন’ এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। দেশটিতে শুধু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই স্থবির হয়ে পড়েনি, বরং ক্রমেই সঙ্ঘাতের প্রত্যাবর্তন ঘটছে, ত্রিপোলিতে প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়াদের সংঘর্ষে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল থেকে বাহিনী রাজধানীতে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় পার্লামেন্টে সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ ফাতি বাশাঘাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দেবীবেহ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানো নতুন সঙ্কটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই সঙ্ঘাত এমন এক ভঙ্গুরতার ইঙ্গিত দেয় যাতে সহজে দেশটি আবার গৃহযুদ্ধে ফিরে যেতে পারে। জাতিসঙ্ঘ যখন সব রাজনৈতিক পক্ষের চুক্তিতে নির্বাচন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে তখন পূর্ব লিবিয়ার কার্যত শাসক খলিফা হাফতার গত সপ্তাহে সতর্ক করে দেন যে, এই প্রক্রিয়াটির প্রচেষ্টার জন্য এটিই হবে ‘চূড়ান্ত সুযোগ’। পশ্চিম লিবিয়ায় নতুন করে আক্রমণ শুরুর কথা খোলাখুলিভাবে উল্লেখ না করলেও হাফতারের সতর্কতাকে অনেকে তার নেতৃত্বে দেশকে একত্রিত করার চেষ্টা করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহারের একটি গোপন হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। যদি তা না হয়, তবে এর একটি সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে, দেশটি দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের মধ্যে বিচ্ছেদে পড়বে। লিবিয়ার স্বাধীনতা দিবসে যে বক্তৃতায় তিনি এই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন তার আগে, রাজনৈতিক ও সাংবাদিক বলয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে হাফতার আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব লিবিয়ার বিচ্ছিন্নতা এবং একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেবেন। এই গুজব অবশ্যই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে, তবে এর বেশ বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে যে, বিদ্যমান বিচ্ছিন্নতাবাদী আওয়াজ ২০২৩ সালে আবারো নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে এবং বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো খারাপ হলে সমর্থন লাভ করতে পারে। তুর্কিয়ে প্রজাতন্ত্রের শত বর্ষে এরদোগানের চ্যালেঞ্জ ২০২৩ সাল হবে আধুনিক তুর্কিয়ে প্রজাতন্ত্রের ১০০তম জন্মদিন। এক শতাব্দী আগে অটোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের ওপর দেশটি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এখন পরিস্থিতি অনেক বেশি উত্তেজনাপূর্ণ। কঠোরভাবে ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমমুখী প্রজাতন্ত্র থেকে বিবর্তিত হয়ে একটি পুনরুজ্জীবিত আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়ে কঠোর সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সংস্কারের একটি সিরিজ শুরু হয় তুরস্কে। দেশটির আধিপত্যবাদী প্রভাব বিস্তার এবং আরো আত্মবিশ্বাসী স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নিয়েছে এরদোগানের বর্তমান সরকার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct