নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে বার বার সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই মেলা আয়োজনের জন্য কেন্দ্র সরকার যেমন ১ পয়সাও রাজ্যকে দেয় না তেমনি বার বার দাবি জানালেও এই মেলাকে এখনও ‘জাতীয় মেলা’র তকমা দেয়নি কেন্দ্র সরকার। দিয়েছে কুম্ভমেলাকে। সেই মেলার জন্য প্রতি বছর বিস্তর খরচ করে মোদি সরকার। এমনকি কোভিডের মধ্যেও সেই মেলার আয়োজন থেকে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে আসেনি কেন্দ্র। কিন্তু বার বার কেন্দ্রের বঞ্চনায় তিতিবিরক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবার এই মেলা নিয়ে ভিন্ন পথে হাঁটা দিলেন। গঙ্গাসাগর মেলা যাতে কলকাতার দুর্গাপুজোর মতো ইউনেস্কোর ‘ইনট্যানজিবল হেরিটেজ’-এর তকমা পায়, সে জন্য এবার সরাসরি ইউনেস্কোর দ্বারস্থ হচ্ছে রাজ্য সরকার। এর জন্য প্রাথমিক ভাবে স্টাডি পেপার তৈরির জন্য নথি সংগ্রহের কাজ রাজ্য নিজেই শুরু করে দিয়েছে।কলকাতার দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে ইউনেস্কোর ‘ইনট্যানজিবল হেরিটেজ’-এর তকমা এনে দেওয়ার প্রাথমিক কাজ ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেছিলেন সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সের তপতী গুহঠাকুরতা। গঙ্গাসাগর মেলার জন্য নবান্ন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরকে নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি অফিসার পর্যায়ের কমিটি গড়া হয়েছে। আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ, স্থানীয় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে নথি সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। মতামত নেওয়া হচ্ছে বিদ্বজ্জনেদেরও। গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো সাগরমেলার প্রাচীনত্ব, ঐতিহ্য সর্ম্পকিত খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করা। এই বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা জানিয়েছেন, ‘গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সব যাচাই করা হচ্ছে। সাগরদ্বীপের অবস্থান বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে প্রাথমিক স্টাডি রিপোর্ট করতে হবে। ২০২৪ সালে এই ইউনেস্কোতে আবেদন করা হবে।’ তবে এই উদ্যোগ ঘিরে প্রশ্নও উঠছে। কেন্দ্র সরকারকে দূরে সরিয়ে রেখে রাজ্য সরকার কীভাবে পারবে ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করতে?কেননা ইউনেস্কোর নিয়মই বলে দিচ্ছে এই ধরনের আবেদন জানাতে পারবে একমাত্র দেশের সরকার। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কীভাবে আবেদন জানাবে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। এখনও পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ৪৩০ খৃষ্টাব্দ নাগাদ গঙ্গাসাগরের বুকে কপিলমুনির মন্দিরের প্রথম প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল। যদিও সেই মন্দিরের কোনও অস্তিত্বই আজ আর নেই। কেননা সাগরের বুকে তা বিলীন হয়েছে ভাঙনের কারণে। পরে আরও বেশ কয়েকবার মন্দির নির্মীত হলেও কোনও মন্দিরই টিকে থাকেনি ভাঙনের জোরে। এখনকার মন্দিরও কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়েও খটকা আছে অনেকের। ইতিহাসের বাইরে পুরাণেও গঙ্গাসাগর মেলার প্রমাণ মেলে। রাজা ভগীরথ ও সগর রাজার পুত্রদের গল্প কে না জানে। মহাকবি কালিদাসের রঘুবংশেও সাগরমেলার কথা পাওয়া যায়। রামায়ণ, মহাভারতের যুগেও এই মেলার উল্লেখ রয়েছে। আরও বেশ কিছু তথ্য সরকারি আধিকারিকদের হাতে এসেছে। সব খতিয়ে দেখছেন গবেষকরা। কালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাগরমেলার বিবর্তনও হয়েছে। ভাঙনের গ্রাসে মন্দির বার বার চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। নতুন করে গড়ে উঠেছে মন্দির। তবুও হারায়নি এর ধারাবাহিকতা, ঐতিহ্য। প্রতিবছর নিয়ম করে মকর সংক্রান্তিকে সামনে রেখে গঙ্গা মোহনায় দুর্গম এই দ্বীপে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হচ্ছে। তাই রাজ্য সরকার চাইছে এই মেলা পাক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, কেন্দ্রকে বাদ দিয়ে কী আদৌ সেই স্বীকৃতি জুটবে!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct