সুব্রত রায়, গঙ্গাসাগর, আপনজন: গঙ্গাসাগরে মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের সরব হয়েছেন বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে। সেই সরবতায় তিনি হাতিয়ার বানিয়েছেন রেলকে। সাফ জানিয়েছেন, ‘শেষ ১১ বছরে একটাও নতুন ট্রেন দেওয়া হয়নি। এই একটা ছাড়া।’ মমতার এই দাবি বিজেপির কাছে যে একটা বড়সড় অস্বস্তি তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এটাও ঠিক এই ১১ বছরে বাংলা যে একদম নতুন কোনও ট্রেন পায়নি তাও নয়। অবশ্যই পেয়েছে তবে তা দূরপাল্লার। কিন্তু মোদি জমানায় বাংলার মানুষের সব থেকে বড় অভিযোগ অনেক ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ার বা প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলিকে একই গতি, স্টপেজ ও সময়সীমা রেখে সেগুলিকে এক্সপ্রেসে রূপান্তরিত করে দেওয়ার। ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে ওই সব ট্রেনে এক্সপ্রেসের হারেই। এখন একনজরে একটু দেখে নেওয়া যাক মমতার হাত ধরে বাংলা কোন কোন নতুন ট্রেন পেয়েছিল আর মমতার পরেই বা বাংলা কোন কোন ট্রেন পেয়েছে।মমতা দেশের প্রথম মহিলা রেলমন্ত্রী। দুই দফায় তিনি রেলমন্ত্রী ছিলেন। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির আমলে ১৯৯৯-২০০০ সালে এবং দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলে ২০০৯-২০১১ সালে। এই দুই দফায় রেলমন্ত্রী হিসাবে মমতা বাংলাকে খুব কম করেও ৩০টি ট্রেন দিয়েছেন যার মধ্যে অনেকগুলিই মোদি জমানায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ট্রেনগুলি শুধুমাত্র বাংলাতেই চলাচল করে। মমতার হাত ধরে বাংলা পেয়েছে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, কলকাতা-হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস, তেভাগা এক্সপ্রেস, হাওড়া-বালুরঘাট এক্সপ্রেস, গণদেবতা এক্সপ্রেস, মা তারা এক্সপ্রেস, শহীদ এক্সপ্রেস, ধনধান্য এক্সপ্রেস, হাজারদুয়ারী এক্সপ্রেস, লালমাটি এক্সপ্রেস, আরণ্যক এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, হাওড়া মালদা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ভায়া রামপুরহাট, হাওড়া মালদা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ভায়া আজিমগঞ্জ, শালিমার আদ্রা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, রানী শিরোমণি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার, তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস, কাণ্ডারি এক্সপ্রেস, শিয়ালদা রামপুরহাট এক্সপ্রেস, শিয়ালদা আসানসোল এক্সপ্রেস সহ আরও বেশ কিছু ট্রেন। এর পাশাপাশি মমতার হাত ধরে বাংলা পেয়েছে একগুচ্ছ দুরন্ত এক্সপ্রেস, গরিবরথ এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেস, রাজধানী এক্সপ্রেস।কিন্তু মোদি জমানায় এই ছবিটাই বদলে গিয়েছে। বাংলাকে এখন নতুন ট্রেনপ্রাপ্তির জন্য কার্যত চাতকপাখি হয়ে বসে থাকতে হয়। এমনিতেই এখন রেলবাজেট উঠে গিয়েছে বলাই চলে। এখনকার রেলবাজেটে শুধু আয় ব্যায়ের হিসাব, নীতিকথা আর ঘোষণার পর ঘোষণা যার অর্ধেকের বেশি বাস্তবায়িতই হয় না। শুধু তাই নয় মমতার আমলে চালু হওয়া বেশ কিছু ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোদি জমানায়। তার মধ্যে রয়েছে হাওড়া দিঘা এসি এক্সপ্রেস, লালমাটি এক্সপ্রেস, শালিমার আদ্রা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। এছাড়া ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারকে রামপুরহাটের পরিবর্তে বৈদ্যনাথধাম থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ও ট্রেনটির গতি, স্টপেজ ও সময়সারণী আগেকার রুটের অংশে একই রেখে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতী ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার ও রানী শিরোমণি ফার্স্ট প্যাসেঞ্জারকে এক্সপ্রেসে রূপান্তরিত করে সেই হারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দুটি ট্রেনেরই গতি আগেকার মতই আছে। তাদের স্টপেজও একই আছে। তবে মোদি জমানায় কিছু ট্রেন অবশ্যই পেয়েছে বাংলা। তার মধ্যে হামসফর এক্সপ্রেস, এসি এক্সপ্রেস, সাধারন দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন পেয়েছে বাংলা। কিন্তু মমতা যে হারে বাংলাকে নতুন ট্রেন দিয়েছেন সেই হারে মোদি জমানায় মোটেও ট্রেন পায়নি বাংলা। বিশেষ করে শুধুমাত্র বাংলার মধ্যে চলাচল করা নতুন ট্রেনের সংখ্যা মাত্র ১ কি ২।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct