সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: আরও একবার মুখ পুড়ল গেরুয়া বাহিনীর। একই সঙ্গে দেশের মানুষকেও সতর্ক করে দিল গেরুয়া শিবিরের ছড়ানো ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য। ২০২২ সালে মেনস্ট্রিম মিডিয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও যে সব খবর বেশি আলোচিত হয়েছে তার মধ্যে বেশ কিছু খবর কার্যত ভুয়ো খবর বলে চিহ্নিত হয়েছে। সেই সব খবরের সমীক্ষা চালিয়ে একটি বেসরকারি সংবাদসংস্থা একটি রিপোর্ট বার করেছে যা গেরুয়া শিবিরের মুখ পোড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে বছর ভর যে এইরকম ভুয়ো খবরের বেশ দাপট দেখিয়েছে সেটাও উঠে এসেছে এই সমীক্ষায়। সেই সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় মোট ১২৪টি ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল রীতিমত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণের স্বার্থ নিয়ে। সেই সব খবরের মধ্যে বিজেপি সর্বোচ্চ ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। আরও অবাক করার বিষয় হল এই তালিকায় সর্বনিম্নে রয়েছে তৃণমূলের নাম। অর্থাৎ বিজেপি যেমন ভুয়ো খবর ছড়াতে এক্সপার্ট ঠিক তার বিপরীতি সব থেকে কম ভুল ছড়িয়েছে তৃণমূলের হাত ধরে।গত বছর রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে দেশের শাসক দল বিজেপি, শতাংশের হিসাবে ৪৮.১ শতাংশ। কংগ্রেস নেতারা ছড়িয়েছেন মোট ভুয়ো তথ্যের ৩৩.৮ শতাংশ। আম আদমি পার্টির ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা ১০.৪ শতাংশ আর সবচেয়ে কম তৃণমূল কংগ্রেস, মাত্র ২.৬ শতাংশ। অন্যান্য দলগুলোর ক্ষেত্রে সম্মিলিত পরিসংখ্যান ৫.২ শতাংশ। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও ছড়িয়েছে অনেক ভুয়ো খবর। বিজেপি নেতারা দাবি করেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের ফেরাতে সাময়িক ভাবে যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছেন। কিন্তু ভারতের বিদেশ মন্ত্রকই সেই দাবিকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছে। একই ভাবে কংগ্রেস নেতারা অন্ধ্রপ্রদেশের একটি উৎসবের ভিড়ের ছবি টুইটারে দিয়ে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সাফল্য বলে দাবি করেছিলেন! তথ্য বলছে, ২০২২ সালে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীই সবচেয়ে বেশি কটাক্ষ ও রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তার পরই নাম রয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং নরেন্দ্র মোদির।২০২২-এর জানুয়ারিতে বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র টুইটে রাহুল গান্ধীর একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে দাবি করেছিলেন, মাস্ক পরে খাচ্ছেন রাহুল! পরে দেখা যায়, সেটি বানানো ভিডিয়ো। ২০২২-এর জানুয়ারিতে দাভোসের মঞ্চে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে মাঝপথে থেমে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস ও আপের দাবি ছিল, মোদীর টেলিপ্রম্পটার গণ্ডগোল করেছে বলেই এই বিপত্তি, বিশ্বমঞ্চে মুখ পুড়েছে ভারতের। পরে জানা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য মাঝপথে বক্তৃতা থামাতে বাধ্য হয়েছিলেন মোদি। সবচেয়ে বেশি ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর তালিকায় প্রথম দু’টি নাম বিজেপির নবীন কুমার জিন্দল এবং প্রশান্ত প্যাটেল উমরাও। এক বছরে নয় বার ভুয়ো তথ্য শেয়ার করেছিলেন তাঁরা। তার পরই তালিকায় রয়েছেন অমিত মালব্য এবং কপিল মিশ্রের। তবে তৃণমূল নাম একদম তলানিতে থাকা কার্যত বলে দিচ্ছে বাংলার এই শাসক দল বেশ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে চলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং সেই ক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থান বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনায় অনেকটাই শক্তপোক্ত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct