গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের সঙ্গেই ভোট হল দিল্লি পৌরসভার। বিজেপি ভেবেছিল, তিনটি পৌরসভা মিলিয়ে একটি করে ওয়ার্ডের সীমানাবিন্যাস ঘটিয়ে মোট আসন ২৭০ থেকে ২৫০ করে পৌরসভা দখলে রাখবে। দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী কোনওদিন কোনও পৌরসভার ভোটে প্রচার করেননি! মোদিকে নামিয়ে বিজেপি সেই রেকর্ডও গড়ল! তবু তীরে তরি ভিড়ল না। অথচ বছরের গোড়ায় পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভার ভোট হয়েছিল, সেখানে বেগ পেতে হয়নি। এ নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শেষ কিস্তি।
২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশের জনতা শাসক হিসেবে কংগ্রেসকে পছন্দ করলেও পরের বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিকে বেছেছিলেন। ওডিশায় একসঙ্গে ভোট হয়েছিল বিধানসভা ও লোকসভার। সেখানেও জনতা রাজ্যে নবীন পট্টনায়ককে পছন্দ করলেও দিল্লিতে বেছে নিয়েছেন মোদিকে। এই রাজনৈতিক মানসিকতা ও সচেতনতা বিজেপির ভরসা ও শক্তি। মোদির কারণেই জনতা বুঝতে শিখেছে রাজ্যের রাজনৈতিক চালচিত্রের সঙ্গে কেন্দ্রের ক্যানভাসের তফাতটা কোথায়। দেশকে নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি এখনো অবিকল্প। তাঁর বলয়ের ধারেকাছে কেউ নেই। দেশ–বিদেশের যাবতীয় জরিপেও এই সত্য উপস্থাপিত। ২০২৩ তো বটেই, ২০২৪ সালেও তাই মোদিই বিজেপির সেরা তুরুপের তাস। নিজের তো বটেই, সরকারের ভাবমূর্তিও ঝকমকে করতে আগামী বছর অনেক সুযোগ মোদি পাবেন। ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’–এর জন্য রয়েছে অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধন। নিঃশব্দে আগুয়ান কাশী–মথুরার ‘শৃঙ্খলমুক্তি’ আন্দোলনও। লোকসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট রয়েছে জনমুখী চমকের জন্য। খয়রাতি রাজনীতির কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও ভোট জেতার তাড়নায় মোদিও অবতীর্ণ সেই খেলায়। আরও এক বছর ৮১ কোটি দরিদ্রকে বিনা পয়সায় রেশন দেওয়ার ঘোষণাও সেই লক্ষ্যে। ভোট–রাজনীতির সঙ্গে লড়াইয়ে আজ পর্যন্ত এ দেশে অর্থনীতি কখনো জেতেনি! এর বাইরে রয়েছে ‘জি–২০’–এর সভাপতিত্ব। নতুন বছরের পুরোটাই কাটবে সেই উৎসবে। জম্মু–কাশ্মীরের ভোট ভালোয়–ভালোয় সাঙ্গ হলে সেটাও হবে মোদির পাগড়ির আরও এক ঝলমলে পালক। সর্বোপরি যদি তাঁর দৌত্যে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামায়, ‘বিশ্বগুরু’ মোদির কাছে তাহলে ২০২৪–এর হ্যাটট্রিক অবধারিত।
এতৎসত্ত্বেও কংগ্রেস বিজেপির গলার কাঁটা। বিজেপির বিজয়রথের সামনে কিছুটা ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ কংগ্রেসই হাজির করেছে। পরিবারের বাইরে দলীয় সভাপতিত্ব অর্পণ ও ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা—এই দুই সিদ্ধান্ত আঁকড়ে কংগ্রেস শুরু করেছে তাদের নতুন পথচলা। সেই চরৈবেতিতে উৎসাহ জুগিয়েছে হিমাচল প্রদেশ। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম কোনো রাজ্যজয়ের রেশ নিয়ে কংগ্রেস বছর শেষ করল। এই জয় ও ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা নতুন বছরে তাদের সঞ্জীবনী সুধা। ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা গত আট বছরে কংগ্রেসের একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি। এই যাত্রা কংগ্রেসকে চনমনে করে তুলেছে। রাহুল গান্ধীকেও মেলে ধরছে অন্য আলোয়। ‘ননসিরিয়াস’, ‘পার্টটাইম পলিটিশিয়ান’, ‘পাপ্পু’ তকমা ঘুচিয়ে এটা তাঁর নবজন্ম। প্রতিপক্ষ বাধ্য হচ্ছে তাঁর নবমূল্যায়নে। এই যাত্রা বিজেপির বিকল্প রাজনীতির আশ্রয় হবে কি না, তা বোঝা যাবে নতুন বছরে। বিজেপি কিছুটা চিন্তিত। কোভিডের দোহাই দিয়ে যাত্রা বন্ধের উদ্যোগ তারা এমনি এমনি নেয়নি। ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা কংগ্রেসকে কতটা উজ্জীবিত করবে, হৃত শক্তি কতটা ফেরাবে, রাহুলকে কতটা বিশ্বস্ত করে তুলে গ্রহযোগ্যতা বাড়াবে, তার ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনের ভোট–রাজনীতি বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালের মতো চিত্তাকর্ষক হবে কি না। ‘ঘৃণার বাজারে ভালোবাসার দোকান’ খোলার যে ন্যারেটিভ রচনায় রাহুল পদযাত্রী, তা কঠিন লড়াই। দীর্ঘমেয়াদিও। নতুন বছরে ভোটভাগ্য সহায় হলে সেই লড়াই ক্ষুরধার হবে। অবশ্য কে না জানে, একমাত্র কংগ্রেসই পারে নিশ্চিত জয়ের মুখ থেকে অবিশ্বাস্য পরাজয় ছিনিয়ে নিতে! (সমাপ্ত) সৌজন্যে: প্র. আ.
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct