গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের সঙ্গেই ভোট হল দিল্লি পৌরসভার। বিজেপি ভেবেছিল, তিনটি পৌরসভা মিলিয়ে একটি করে ওয়ার্ডের সীমানাবিন্যাস ঘটিয়ে মোট আসন ২৭০ থেকে ২৫০ করে পৌরসভা দখলে রাখবে। দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী কোনওদিন কোনও পৌরসভার ভোটে প্রচার করেননি! মোদিকে নামিয়ে বিজেপি সেই রেকর্ডও গড়ল! তবু তীরে তরি ভিড়ল না। অথচ বছরের গোড়ায় পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভার ভোট হয়েছিল, সেখানে বেগ পেতে হয়নি। এ নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ প্রথম কিস্তি।
বছরের শেষে এভাবে হোঁচট খেতে হবে বিজেপি ভাবেনি। ২০২২ যেভাবে শুরু হয়েছিল, বিজয়রথ যেভাবে গড়গড়িয়ে এগোচ্ছিল, বছর শেষে সেই সুমধুর সমীরণ থমকে গেল। ‘দেবভূমি’ হিমাচল প্রদেশ বোঝাল নজরুল ইসলামের কথাই চিরসত্য, ‘চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।’ শুধু দেবভূমি কেন? দিল্লিও তো বিজেপির থেকে মুখ ঘোরাল! গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের সঙ্গেই ভোট হল দিল্লি পৌরসভার। বিজেপি ভেবেছিল, তিনটি পৌরসভা মিলিয়ে একটি করে ওয়ার্ডের সীমানাবিন্যাস ঘটিয়ে মোট আসন ২৭০ থেকে ২৫০ করে পৌরসভা দখলে রাখবে। দেশের কোনো প্রধানমন্ত্রী কোনো দিন কোনো পৌরসভার ভোটে প্রচার করেননি! নরেন্দ্র মোদিকে নামিয়ে বিজেপি সেই রেকর্ডও গড়ল! তবু তীরে তরী ভিড়ল না। অথচ বছরের গোড়ায় পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভার ভোট হয়েছিল। উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, গোয়া ও মণিপুর দখলে বিজেপিকে বেগ পেতে হয়নি। পাঞ্জাব জয়ের আশা তারা করেনি। জেতেওনি। বছর শেষে গুজরাটে দাপট দেখালেও সব ভন্ডুল করে দিল হিমাচল প্রদেশ ও দিল্লি। দুঃখ ঢাকতে চতুর্গুণ উৎসাহে তারা গুজরাট জয় উদ্যাপন করেছে। সেই ফাঁকে আসল কথাটা কবুল করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসই তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ। কিছুটা মান্যিগণ্যি ও সমীহ তাঁরা কংগ্রেসকেই করেন।
এই দুই দলের কাছে ২০২৩ কোন বার্তা বয়ে আনতে পারে, সেই আভাস ২০২২ কিছুটা স্পষ্ট করেছে। সাত বিধানসভা ভোটের মধ্যে পাঁচটিতে জেতা মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়। যদিও প্রতিটি ভোট প্রমাণ করেছে বিজেপি কতটা মোদিনির্ভর। উত্তর প্রদেশ একমাত্র রাজ্য, যেখানে মোদির পাশে কিছুটা হলেও যোগী আদিত্যনাথের উপস্থিতি চোখ টেনেছে। অন্যত্র এক থেকে একশ নরেন্দ্র মোদিই! উত্তরাখন্ড ও হিমাচল প্রদেশে তিনি তো বলেইছেন, জনতা যেন তাঁকেই ভরসা করেন। তাঁর ওপর আস্থা রাখেন। তাঁকেই যেন ভোট দেন। একই ছবি গুজরাটেও। তবু কেন হিমাচল প্রদেশ ও দিল্লির জনতা তাঁর ওপর ভরসা রাখল না, সেই উত্তর বিজেপিকে নতুন বছরে খুঁজতেই হবে। কারণ, ভবিষ্যতে তাদের চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন। কঠিন এই কারণে, নতুন বছরে মোট ৯টি রাজ্যে বিধানসভার ভোট। এগুলোর মধ্যে চার বড় রাজ্যে কংগ্রেস তাদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। এদের মধ্যে রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস ক্ষমতাসীন। মধ্যপ্রদেশ তারা হারিয়েছিল দলত্যাগের কারণে। সেখানে পাল্টা ছোবল মারতে কংগ্রেসের গোষ্ঠীপতিরা এখনো এককাট্টা। রাজস্থানের মতো বিভাজিত নয়। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে বিজেপিতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল। কর্নাটকের শাসক হিসেবে তারা যত দুর্বল হচ্ছে, তত বেশি করে আঁকড়ে ধরছে কট্টর হিন্দুত্ববাদ ও মুসলমান বিরোধিতাকে। দক্ষিণি এই রাজ্যে কংগ্রেসের দুই অধিপতি সিদ্ধারামাইয়া ও ডি কে শিবকুমারের মধ্যে মিল ভূমিপুত্র কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ঘটাতে পারলে বিজেপির হালে পানি পাওয়া কঠিন। ওই রাজ্যে ভোট মে মাসে। চমক দেখাতে পারলে নভেম্বর–ডিসেম্বরে রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশের ভোটে কংগ্রেসের পালে বাড়তি হাওয়া লাগবে। দক্ষিণের অন্য রাজ্য তেলেঙ্গানায় জয়ের আশা দেখছে বিজেপি। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির বাড়া ভাতে ছাই পড়লে অঘটন গণ্য হবে না। ওই রাজ্যে অনেক দিন ধরেই কাঁঠালের ওপর মাছির মতো ভনভন করছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ প্রাণপাত করছেন। একদা শক্তিধর কংগ্রেস সেখানে নকড়াছকড়া। বাকি চার রাজ্যের মধ্যে ফেব্রুয়ারি–মার্চে ভোট হবে ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে, মিজোরামে বছর শেষে। উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় ভারতে বিজেপির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তাঁর কারণেই বিজেপি এই তল্লাটে নিশ্চিন্ত। এই ৯ রাজ্যের মোট লোকসভা আসন ১১৬টি। সাধারণত রাজ্যের শাসক দল লোকসভা ভোটে বাড়তি সুবিধা পায়। এটাই ভোটের পাটিগণিত। কিন্তু গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে জনতা তাদের সচেতনতা ও বোধবুদ্ধির প্রমাণ রেখেছে।
সৌজন্যে: প্র. আ.
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct