আব্দুস সামাদ মণ্ডল, কলকাতা, আপনজন: ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে নিউ টাউনের ইকো পার্কের কাছে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিষয়ের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র শাকিল আহমেদের। কিন্তু পালিয়ে যাওয়া গাড়ির চালক ছিল অধরা। ঘাতক গাড়ির চালককে গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে নিউ টাউনে পথে নেমে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করতে থাকেন আলিয়ার পড়ুয়ারা। আলিয়ার পড়ুয়ারা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে থেকে নিউটাউনের নারকেলবাগান পর্যন্ত মিছিল করেন । মিছিল আটকালে পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভকারীদের। ফের তারা বিশ্ববাংলার সামনে অবরোধ করার জন্য যান। সেখানেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। তখন বিক্ষোভকারী ছাত্ররা সেখানে বসেই আন্দোলন শুরু করেন। তারা পুলিশকে অপরাধী ধরার জন্য আরও ২৪ ঘন্টা অতিরিক্ত সময় দেন। সেই সময়ের মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে না পারলে আলিয়া ইউনিভার্সিটির তিনটি ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারা বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। পুলিশের আশ্বাসে যদিও অবরোধ উঠে যায়।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ফরেনসিক টিম সোমবার সন্ধ্যায় পৌঁছয় টেকনো সিটি থানায়। এরপর সেখান থেকে তারা রওনা দেয় রুবির কাছে টয়োটা ওয়ার্কশপে। ঘাতক গাড়িটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় সেখানে। ওই ওয়ার্কশপ থেকে একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তার সূত্র ধরে বউবাজার এলাকা থেকে প্রতীম খারা নামে ঘাতক গাড়ির চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘাতক গাড়িটির মালিকের পরিচয় ঘিরে শোরগোল পড়ে। গাড়ির নম্বর WB02AN0100 তুলে ধরে জানানো হয়, টয়োটা গাড়িটির মালিকের নামধামও। পার্থপ্রতিম ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানান, ‘১ জানুয়ারি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে ধাক্কা মেরে হত্যা করা টয়োটা করোলা গাড়িটি বিবেক গুপ্তর, যিনি তৃণমূল বিধায়ক ও সন্মার্গ মিডিয়ার মালিক।’ পার্থপ্রতিম প্রশ্ন তুলে আরও লেখেন, ‘গাড়িটি টয়োটা ওয়ার্কশপ থেকে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে, কিন্তু পুলিশ কেন গাড়ির মালিকের নাম প্রকাশ করতে ইতস্তত করছে? সন্মার্গের যে কর্মী গাড়িটিকে ওয়ার্কশপে এনেছিলেন তিনি গ্রেফতার হয়েছেন ও বলির পাঁঠা হয়েছেন!’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের প্রশ্ন ওঠায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে থাকে, ঘাতক গাড়িটির মধ্যে কি তাহলে প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ তথা বিধায়ক বিবেক গুপ্ত ছিলেন? যদিও এ নিয়ে বিবেক গুপ্ত বা সন্মার্গ মিডিয়ার তরফে কোনও বিবৃতি মেলেনি। এছাড়া প্রশ্ন ওঠে, একজন বিধায়কের গাড়ি ছাত্রকে পিষে মারার পরও তিনি কেন নিজেই গাড়িটিকে থানায় নিয়ে গিয়ে আত্মসমর্পণ করালেন না। তড়িঘড়ি ওয়ার্কশপে নিয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মেরামত করার উদ্দেশ্য কি ছিল ঘাতক গাড়ির চিহ্ন লোপাট করে দেওয়া? যদিও পুলিশ এব্যাপারে জানায়নি গাড়ির মধ্যে আরোহীদের কেউ আহত হয়েছিলেন কিনা, কিংবা ঘাতক গাড়িটির মধ্যে সত্যিই তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্ত ছিলেন কিনা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct