সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বামেরা বাংলার ক্ষমতায় এসেছিল, ‘লাঙল যার জমি তাঁর’ শ্লোগান তুলে। সাড়ে ৩ দশকের রাজত্বপাটের শেষের দিকে সেই শ্লোগানই পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। শ্লোগান উঠেছিল ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছিল বাংলার কৃষি, কৃষকসমাজ, বর্গাদার, ক্ষেতমজুর সর্বোপরি গ্রামীণ সমাজব্যবস্থা ধ্বংস করে কাছা খুলে জমি দখলের পথে নেমে পড়েছেন বাম নেতা থেকে সরকার। বাংলার মানুষ কিন্তু এই দখলদারির নীতি মেনে নেননি। তাঁরা বাংলার অগ্নিকন্যার পাশে দাঁড়িয়ে পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন বঙ্গোপসাগরের জলে। ২০১১ সালে সেই পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলার ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নজর দিয়েছেন রাজ্যের কৃষি ও কৃষক সমাজকে বাঁচিয়ে শিল্পের গতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সেই সূত্রেই নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই চালু হয়ে গেল শিল্পসাথী পোর্টাল।ওয়েস্টবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করার জন্য যে প্রকল্পটি শুরু হয় তা শিল্পসাথী প্রকল্প নামে প্রচলিত। সেই প্রকল্পের নামেই এবার একক উইন্ডো পরিষেবা পোর্টাল চালু হয়ে গেল। কিন্তু প্রশ্ন এতে আমজনতার কী লাভ হল? এই পোর্টালের মাধ্যমে আদতে বাংলায় মধ্যবিত্ত সমাজের যুবকদের উৎসাহিত করা হবে কি? বাংলার বুকে ক্ষুদ্র শিল্প বা ব্যবসা শুরু করার জন্য কি সাহায্য মিলবে?। যে শিল্প বা ব্যবসা আরও অনেক মানুষকে আয়ের মুখে দেখাতে সাহায্য করবে! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে নতুন কোনও ব্যবসা বা শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারি অনুমোদন। অনেকেই জানেন না ঠিক কোন পদ্ধতিতে এগোলে ব্যবসা বা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় লোন মিলবে। জানেন না কোথায় কীভাবে আবেদন করলে তা অনুমোদন পাবে। এই সমস্যারই সমাধান করবে শিল্পসাথী পোর্টাল। যদি আপনার কোন ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছা থাকে নিজের বাড়ি থেকেই এবং প্রয়োজনীয় গাইডেন্সের জন্য আটকে রয়েছেন সে ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই এই পোর্টালের সাহায্য নিতে পারবেন।হবে: অভিষেক
এই পোর্টাল চালু পিছনে মুখ্য যে উদ্দেশ্যগুলি রয়েছে সেগুলি হল – বাংলার বেকার যুবকদের স্থানীয়ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থাপনে উৎসাহ প্রদান, গ্রামবাংলার শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সাধন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের বাংলায় বিনিয়োগের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা, খুব অল্প সময়ে ব্যবসার শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্র সহ লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং বাংলার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের জন্য সাহয্য করা। এমনিতেই ‘শিল্পসাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকার বেকার যুবক-যুবতীদের ঋণ প্রদান করে ব্যবসা শুরু করার জন্য, বা ক্ষুদ্র বা কুটির শিল্পের স্থাপনার জন্য। এবার থেকে সেই সব ঋণ ও ব্যবসা শুরু কিংবা শিল্প স্থাপনের জন্য যাবতীয় আবেদন বাড়িতে বসেই করা যাবে এই পোর্টালের মাধ্যমে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে শিল্পসাথী প্রকল্পের সুবিধা পেতে কারা কারা আবেদন জানাতে পারবেন? আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা তথা ভারতবর্ষের নাগরিক হতে হবে এবং পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও প্যান কার্ডের ফটোকপি দিতে হবে। এছাড়াও আবেদনকারীর জন্মের প্রমাণপত্র, মাধ্যমিকের অ্যাডমিট জমা দিতে হবে। আবেদনকারীকে যে কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান বা স সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণীতে পাস হতে হবে। আবেদনকারীর যদি কাস্ট সার্টিফিকেট থাকে তাহলে সেই সেই কাস্ট সার্টিফিকেটের ফটোকপি লাগবে। সমস্ত আবেদনকারীর বর্তমানে পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফ লাগবে। আবেদনকারীর নূন্যতম বয়স ১৮ হতে হবে এবং ৫০ বছরের বেশি হওয়া চলবে না। সবথেকে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো আবেদনকারীর নাম অবশ্যই এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।আবেদন করা যাবে অনলাইন ও অফলাইন দুই পদ্ধতিতেই। অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রথমে আপনাকে শিল্পসাথী প্রকল্পের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https://www.silpasathi.in/ তে আসতে হবে। যদি আপনি এই ওয়েবসাইটে প্রথমবার আসেন তাহলে আপনাকে আপনার মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের পর ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে হবে। এরপর, শিল্পসাথী প্রকল্পের ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে এবং কোন শিল্পের জন্য আবেদন করছেন সেটাও জানাতে হবে। কত টাকা ঋণ নিতে চাইছেন সেটিও জানাতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করে সাবমিট অপশনে ক্লিক করে অ্যাপ্লিকেশনটি সাবমিট করবেন। আর যদি অফলাইনে করতে চান তাহলে সবার আগে অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি এ-ফোর সাইজের সাদা কাগজে প্রিন্ট আউট করে নিয়ম অনুযায়ী অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে। তারপর তাতে আবেদনকারীর বর্তমানের রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফ সহ প্রয়োজনীয় নথিগুলি ফর্মের সঙ্গে জুড়ে দিতে হবে। এরপর আবেদনকারীকে ফর্মে সই করে বিডিও বা এসডিও অফিসে গিয়ে জমা করতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct