সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বাংলার বুকে এর আগে একাধিক পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা গিয়েছে একই আসনে একই পরিবারের দুই বা তিন সদস্যের ভোটে লড়াই করার ঘটনা। এবার কিন্তু বাংলার মেয়েকে পাল্টা চাপ দিতে পাড়ার মেয়েদের মাঠে নামাতে চাইছেন বামেরা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের তরফে ‘বাংলার মেয়ে’ কর্মসূচি ও প্রচার শুরু করা হয়েছিল। ভোট বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘বাংলার মেয়ে’ এই প্রচার তৃণমূলকে শুধু যে বহিরাগত বিজেপিকে হারাতেই সাহায্য করেছে তাই নয়, বাড়তি ভোটও এনে দিয়েছে ইভিএমে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বামেরা এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে চালু করছে নতুন প্রচার কর্মসূচি ‘পাড়ার মেয়েই প্রার্থী’। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে রাজ্য রাজনীতির পাশাপাশি জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে উত্থান বাংলার মহিলাদের রাজনীতির ময়দানে নামাতে অনেক সাহায্য করেছে। মমতাকে দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন রাজনীতির ময়দানে লড়াই করতে। বামেরা এবার সেই এগিয়ে আসা মুখগুলিকেই তাঁদের দলের প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে।একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার বুক থেকে বিলুপ্ত হ্যে গিয়েছে বামেরা। যারা ৩৪ বছর ধরে বাংলার বুকে রাজত্বপাট চালিয়েছে তাঁরা ওই নির্বাচনে একটিও আসনে জয়ের মুখে দেখতে পারেনি। তবে বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যে হওয়া বেশ কিছু বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে এবং ৩ দফার পুরসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে বামেদের ভোট বাড়ছে।
যে ভোট বামেদের ঝুলি থেকে বেড়িয়ে রামের ঝুলিতে চলে গিয়েছিল সেই ভোটই আবার ফিরতে শুরু করেছে বাম ঝুলিতেই। সেই হিসাবেই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন বামেদের কাছে কার্যত হারানো মাটি ফিরে পাওয়ার লড়াই। সেই সূত্রেই তাঁদের নয়া সিদ্ধান্ত ‘পাড়ার মেয়েই প্রার্থী’। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এমনিতেই মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সেই সব আসন টার্গেট করে আরও বেশি করে মহিলা মুখকেই সামনে আনতে চাইছে আলিমুদ্দিন। শুধু পার্টির নেতা, কর্মীদের পরিবারের মহিলাদের ওপর নির্ভর না করে বুথে বুথে সাধারণ পরিবারের মহিলা মুখকে পার্টিতে নিয়ে আসতে চাইছে আলিমুদ্দিন নেতৃত্ব।তবে সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পাড়ার মেয়েকে প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরার পরিকল্পনা বাংলার বাম নেতৃত্বের নয়। এই পরিকল্পনা কার্যত নির্দেশ হিসাবে এসেছে বাংলার বাম নেতৃত্বের কাছে। আর সেই নির্দেশ পাঠিয়েছে দলের পলিটব্যুরো। সেই নির্দেশিকায় কার্যত বলে দেওয়া হয়েছে, দলে অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে শ্রেণি বিন্যাসের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বিন্যাসের ওপর বিশেষ করে গুরুত্ব দিতে হবে। মহিলাদের অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়টি নজর রাখতেই হবে। মহিলা মুখ বেশি বেশি করে পার্টিতে এলে তবেই হারানো ভোটব্যাঙ্ক অনেকটা ফিরবে। বিজেপিকেও অনেকটা টক্কর দেওয়া সম্ভব হবে। নেতৃত্বে যাতে সাধারণ পরিবার থেকে মহিলাদের আরও বেশি করে তুলে আনা যায় সেই বার্তাও দলের মহিলা সংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতিকে দেওয়া হয়েছে পার্টির তরফে। গ্রামে গ্রামে মহিলাদের সংগঠিত করে দলের বুথ কমিটিতে তাঁদের আরও বেশি করে রাখতে হবে। পঞ্চায়েতে বড় সংখ্যক আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। স্বাভাবিকভাবে পঞ্চায়েত স্তরে নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে মহিলারা। সেই সব জায়গায় এলাকার দলীয় নেতাদের পরিবারের সদস্য মহিলাদের প্রার্থী না করে একেবারে সাধারণ পরিবারের মহিলাদের প্রার্থী করা হোক। যে সমস্ত মহিলারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাঁদেরই দলের প্রার্থী করা হোক।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct