নিজস্ব প্রতিবেদক, বর্ধমান, আপনজন: বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জের সিয়ারশোল রাজ হাইস্কুলে কর্মরত অটোমোটিভ বিভাগের এক ৩৭ বছর বয়সী শিক্ষক বিভাস ব্যানার্জি বিদ্যালয়ে ডিউটি চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত মারা যান। সেই শিক্ষকের মৃত্যুতে তার অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন চুক্তিভিত্তিক ‘বঞ্চিত’ শিক্ষকরা। এ ব্যাপারে চুক্তিভিত্তিক ‘বঞ্চিত’ শিক্ষকদের তরফে জাাননো হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার ১৬টি সরকার ও সরকার পোষিত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সমগ্র শিক্ষা মিশনের অন্তর্গত ভোকেশনালাইজেশন অফ স্কুল এডুকেশনের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বৃত্তিমূলক বিষয়ে শিক্ষাদান শুরু হয়। পূর্ব বর্ধমান জেলার স্কুলের সংখ্যা ৩৭টি। রাজ্যে সর্বমোট ৬৭৬টি বিদ্যালয়ে চলছে। শিক্ষকের সংখ্যা ১৩৫২ জন। এই বিষয়গুলি মূলত : অটোমোটিভ, রিটেল, হেল্থ কেয়ার, ইনফরমেশন টেকনোলজি, টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ইত্যাদি। স্থায়ী বিষয়, স্থায়ী নিয়োগ নীতি থাকা সত্ত্বেও এই বিষয়গুলিতে পঠন পাঠনের জন্য শিক্ষক নিয়োগ ও এনএসকিউএফ বৃত্তিমূলক শিক্ষা পরিচালনার দায়ভার দেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থার হাতে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় শিক্ষকদের, যার ফলে শিক্ষক, শিক্ষিকাদের বেতন অনিয়মিত। শিক্ষা দপ্তরের অধীনে সমগ্র শিক্ষা মিশনের অনান্য কর্মীদের মতো কিছুই ন্যূনতম সুযোগ, সুবিধা মেলে না। বারংবার শিক্ষা দপ্তর ও জেলা বিদ্যালয় আধিকারিক দপ্তরে জানিয়েও লাভ হয়নি। তারা আরও জানান, গত ৫ ডিসেম্বর সিয়ারশোল রাজ হাইস্কুলে কর্মরত অটোমোটিভ বিভাগের শিক্ষক বিভাস ব্যানার্জি বিদ্যালয়ে ডিউটি চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।। তাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় স্বতীর্থ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট অনুব্রত ঘনিষ্ঠ একটি সংস্থার পক্ষ থেকে। তাদের অভিযোগ, শিক্ষকদের থেকে ইএসআইসিও জোরপূর্বক দুটো শেয়ার এমপ্লয়ি ও এমপ্লয়ার শেয়ার কাটা হয়। শিক্ষকদের নূন্যতম সামাজিক সুরক্ষা না থাকার কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলি বেনিয়ম করার সুযোগ পায়। বিভাস বাবুর মৃত্যুতে নিয়োগ কর্তার তরফ থেকে ও সরকারি তরফ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ ও চাকরিও মেলেনি। যার ফলে তাঁর পরিবারও অথৈ জলে পড়ে যান বিভাস বাবুর পরিবার। বাড়ীতে স্ত্রী ও ছোট্ট পুত্র বর্তমান। এমতাবস্থায় শিক্ষকের অবর্তমানে তাঁর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ায় পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবার সংগঠন।
বিভাস বাবুর সহকর্মীদের বেতন অনিয়মিত, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সঙ্গে দিন কাটানো স্বত্বেও বিভাসবাবুর ঘটনাটি তাঁরা কেউই মেনে নিতে পারেননি। প্রত্যেকে সংকল্প নেয় এরকম যেনো কোনো পরিবারের অবস্থা না হয়, তাই নিজেরা চাঁদা তুলে এই শিক্ষকদের সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবার আজ বিভাসবাবুর বাড়ীতে গিয়ে উনার স্ত্রী রত্না ব্যানার্জির হাতে 1 লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন এবং প্রতিশ্রুতি নেন ভবিষ্যতে এই পরিবারের পাশে থাকার জন্য। সরকারের উপর তাঁরা ক্ষোভও দেখিয়েছেন । অনিশ্চিত ভাবে কাজ করলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে যে একটা পরিবারের কি সমস্যা হয় তা সরকারের বোঝা উচিৎ বলে শিক্ষক মহল দাবী করেছেন। আজ 1 লক্ষ টাকার চেক পরিবারের হাতে প্রদান করার সময়ে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি সৌরভ সর, রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক নির্মল মন্ডল ও জেলার শিক্ষক কমলেন্দু দে। বিভাস ব্যানার্জি বাবুর বাড়িতে পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডাল সাউথ বাজার, অরবিন্দ নগরে গিয়ে উনার স্ত্রীর সাথে দেখা করেন শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবারের রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ ভৌমিক বলেন “ 6 বছর থেকে 10 বছর পর্যন্ত কাজ করেও কোনো নূন্যতম সামাজিক সুরক্ষা নেই আমাদের বিভাসবাবুর মৃত্যুতে সেটাই প্রমাণিত হলো,সরকারের পাশে থাকা উচিৎ ছিলো, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সরকার পাশে নেই। আমাদের খাওয়ার অনিশ্চিত তবুও আমাদের সহকর্মীর পরিবারকে ভেসে যেতে দিতে পারিনা, নৈতিক কর্তব্য হিসেবে পাশে দাঁড়ালাম। সরকারের কাছে আবেদন বিভাস বাবুর পরিবার যেনো বিচার পায় ও চাকুরী অবস্থায় মৃত্যুতে সরকার যেনো বিভাসবাবুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও একজনকে চাকুরী প্রদান করে, না হলে পরিবারের বাকী সদস্যরা ধ্বংস হয়ে যাবে”।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct