ডাক ফার্মিং কতটা লাভজনক? কিভাবে শুরু করবেন?
বিশেষ প্রতিবেদক
গ্রামীণ অর্থনীতিতে হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। প্রথম দিকে ছোট আকারের খামার করা ভালো। পরবর্তীতে বাণিজ্যিক আকারে খামার করা যেতে পারে। ডিম পাড়ার জন্য লেয়ার হাঁস পালন করতে হয়। এগুলোর মধ্যে খাকি ক্যাম্বল, ইন্ডিয়ান রানার, দেশি পাতি হাঁস উল্লেখযোগ্য। মাংসের জন্য অন্যান্য প্রজাতির হাঁস পালন করতে হয়। আমাদের দেশে হাঁসের বেশ ভালই জনপ্রিয়তা আছে। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনের ক্ষেত্রে উপযোগী। কিন্তু আমাদের দেশে হাসের চেয়ে মুরগির জনপ্রিয়তা টাই বেশি। কিন্তু বর্তমানে ও হাঁসের ভালোই জনপ্রিয়তা রয়েছে আমাদের দেশে। পালন করুন হাঁস পালনের জন্য এমন পরিবেশ থাকা উচিত, যেখানে জলবায়ু আর্দ্র থাকে। হাঁসকে জলচর পাখির শ্রেণীতে গণনা করা হয়। গ্রামের পুকুর, ধান ও ভুট্টা ক্ষেতে এটি পালন করা যায়। হাঁস একটি জলচর পাখি। হাঁস পালনের জন্য তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়া উচিত।
খাদ্য:
খাবার শুকনো অবস্থায় খাওয়ালে অবশ্যই সঙ্গে জলের পাত্র রাখতে হবে। বাচ্চা হাঁস খাবার মুখে পুরেই জলের সাহায্যে গিলে ফেলে। এ সময় বাচ্চা হাঁস সাবলীলভাবে বেড়ে উঠবে। পরবর্তীতে নিজেদের তৈরি করা খাদ্য খাওয়ানো যাবে। তৈরিকৃত খাদ্যে উপাদান সঠিকভাবে থাকায় বাচ্চার বৃদ্ধি ঠিক মতো হয়। নিজেদের তৈরিকৃত হাঁসের খাদ্য তালিকায় যেসব উপাদান থাকা আবশ্যক তা হলো ধান, চাউলের কুড়া, চাউলের খুদ, গম ভাঙা, গমের ভুষি ইত্যাদি।এসব দ্রব্য ভালোভাবে মিশিয়ে হাঁসকে খেতে দিতে হবে। তাছাড়া শামুক, ঝিনুক ভেঙে খাওয়ানো যায়। ছোট বাচ্চাকে শামুক-ঝিনুক খুবই অল্প পরিমাণে খাওয়ানো যেতে পারে। উন্নত জাতের হাঁসের খাদ্য চাহিদা কম। এরা সাধারণত ১৬০-১৮০ গ্রাম খাদ্য প্রতিদিন খেয়ে থাকে। হাঁসের দিনের খাবার তিন ভাগে ভাগ করে সকাল, দুপুর ও বিকেল বেলা দিতে হবে। গৃহপালিত হাঁসকে নির্দিষ্ট সংকেতে ডাক দিলে তারা খাবার খেতে চলে আসে। আবার প্রত্যেক দিন নির্দিষ্ট সময় খাবার দিলে ঠিক ওই সময় তারা খাবার খেতে চলে আসবে। হাঁসের বাচ্চা পরিপূর্ণ হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে মাছের পোনা ছাড়তে হলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ছোট মাছের পোনা হাঁস ধরে ফেলে বা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে ১৫ দিনের মতো পূর্ণবয়স্ক হাঁসকে বদ্ধ অবস্থায় পালন করা যেতে পারে।
ডিম সংগ্রহ :
সব জাতের হাঁসি সাধারণত ২২-২৩ সপ্তাহের মধ্যে ডিম পাড়া আরম্ভ করে। ডিম পাড়া শুরুর পূর্বে হাঁসিকে সঠিকভাবে খাদ্য দিতে হবে। যদিও ডিম পাড়ার ১৫ দিন আগে থেকে তাদের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। ডিম পাড়া অবস্থায় তাদের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ডিম পাড়া অবস্থায় হাঁসিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের জোগান দিতে পারলে দীর্ঘদিন ধরে ডিম পাওয়া যায়। হাঁসি সাধারণত খুব সকাল বা সকালের দিকে ডিম পাড়ে। এজন্য হাঁসিকে খুব সকালে ঘর থেকে ছাড়া যাবে না। একটু দেরি করে ছাড়তে হবে নতুবা জলের মধ্যে ডিম পাড়ার প্রবণতা দেখা যাবে। প্রথম অবস্থায় হাঁসির ডিম একটু ছোট আকারের হলেও পরবর্তীতে তা স্বাভাবিক আকারের হয়ে যায়। হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে আকারে বড় ও ওজন বেশি হয়। সকালের ডিম সংগ্রহ করার সময় খাদ্য খেতে দিতে হবে। ডিম সংগ্রহের পর ওই ডিমে বিষ্ঠা লেগে থাকলে তা জল দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি কোন হাঁসি ডিম না পাড়ে সে ক্ষেত্রে ওই হাঁসিটি চিহ্নিত করে ঝাঁক থেকে বাদ দিতে হবে। এজন্য হাঁসির সংখ্যা ও ডিম উৎপাদন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। হাঁসি ডিম পাড়বে কি পাড়বে না তা হাত দিয়ে ডিমের থলি পরীক্ষা করে বোঝা যায়। শুধু ডিমের জন্য হাঁস পালন করলে ওই হাঁসের সঙ্গে কোন পুরুষ হাঁস রাখার দরকার নেই। কিন্তু ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর প্রয়োজন হলে ৭-৮টি হাঁসির জন্য ১টি হাঁসা (পুরুষ হাঁস) পালন করতে হবে।
যেভাবে হাঁসের খামার শুরু করবেন:
হাঁসের থাকার জন্য এমনভাবে ঘর বানাতে হবে যেন আলো-বাতাস যাওয়া-আসা করতে পারে। ঘরের আশপাশে জলাধার থাকলে ভালো হয়। ১০০টি হাঁস নিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার হাঁসের খামার। ১০০টি হাঁসের খামার গড়তে ১৫টির বেশি হাঁসের বাচ্চা নিয়ে শুরু করতে হবে। প্রজননের জন্য হাঁসের খামারে ১০:১ পরিমাণে হাঁস এবং হাঁসা রাখতে হবে। বড় হলে প্রয়োজনীয় হাঁস ও হাঁসা রেখে অন্যগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে বাচ্চা এনে অন্তত সাত দিন সেগুলোকে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় রাখতে হবে। এ জন্য শীতের সময় বেশি তাপ ক্ষমতাসম্পন্ন লাইট দিয়ে ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে রাখা জরুরি। গরমের দিনে ঘর ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে হাঁসগুলো থাকার জায়গায় ধানের তুষ অথবা কাঠের গুঁড়া দিয়ে বিছানা তৈরি করতে হবে। ঘরের আশপাশ পরিষ্কার করাটাও জরুরি। কারণ অপরিষ্কার জায়গা থেকে রোগ-জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
হাঁস পালনে লাভ:
বছরে হাঁস ডিম দেয় গড়ে ২৩০টি। ১০০টি হাঁসের ৯০টি হাঁস ডিম দিলে বছরে ডিম পাওয়া যাবে ২০ হাজার ৭০০টি। ৭ টাকা করে ২০ হাজার ৭০০টি ডিমের দাম এক লাখ ৪৪ হাজার ৯০০ টাকা। একটি হাঁস গড়ে দুই-তিন কেজি হয়। তিন বছর ডিম দেওয়ার পর একেকটা হাঁস গড়ে ২০০ টাকা হিসাবে ১০০টি হাঁস বিক্রি করে পাওয়া যাবে ২০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে এক বছরে নিট লাভ ৫৮ হাজার ৪০০ টাকা।
হাঁসের রোগ :
মুরগির তুলনায় হাঁসের রোগ-বালাই খুবই কম বলেই হাঁস পালন করা খুব সহজ। হাঁসের প্রধান রোগ হলো ডাগ প্লেগ, ডাক কলেরা, প্যারালাইসিস ইত্যাদি। এছাড়াও অন্যান্য রোগে হাঁস আক্রান্ত হতে পারে। হাঁসের ভ্যাকসিন নিকটস্থ সরকারি প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করতে হয়। ঝাঁকের মধ্যে কোন হাঁসের আচরণ অস্বাভাবিক পরিলক্ষিত হলে তাকে হাঁসের ঝাঁক থেকে আলাদা করে রাখতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি হাঁসটির কোন রোগ হয়ে থাকে অথবা আঘাতপ্রাপ্ত হয় সেক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। হাঁসের যে কোন রোগ সম্পর্কে জানার জন্য ব্লক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct