একদিকে প্রধানমন্ত্রী যিনি ফ্লাইওভারে ২০ মিনিটের জন্য আটকে থাকা সত্ত্বেও নিজের দলের সমর্থকদের জন্য জানালার কাঁচ নামিয়ে দেন না, অন্যদিকে রাহুল গান্ধি প্রত্যেক শিশু, বৃদ্ধ এবং যুবককে আলিঙ্গন করছেন। অপরিচিতের হাত ধরে হাঁটছেন, দৌড়চ্ছেন, খেলছেন। ১০০ জনের বেশি ‘ভারতযাত্রী’ রাহুল গান্ধির সঙ্গে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত পথ হাঁটছেন। রাজ্যের শুরু থেকে সীমান্তের শেষ পর্যন্ত সফর করছেন। হাজার হাজার কর্মী পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। এ নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ শেষ কিস্তি।
এই রাহুল গান্ধি প্রতি সন্ধ্যায় দেশের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং ধনী-গরিব ব্যবধান সম্পর্কে দেশকে সতর্ক করছেন। মর্যাদা ও ভারসাম্য না হারিয়ে ঘৃণার রাজনীতিকে আক্রমণ করছেন। নতুন রাহুল গান্ধির সাক্ষী এখন গোটা দেশ। রাহুল গান্ধি এবং কংগ্রেসের বাইরেও এই যাত্রা দেশের গণ-আন্দোলন এবং গণসংগঠন সমূহের মধ্যে একটি নতুন শক্তি সঞ্চার করছে এবং সমন্বয় ঘটিয়েছে। এই যাত্রার আহ্বান জানিয়ে কংগ্রেস দেশের সব রাজনৈতিক দল, গণ-আন্দোলন ও গণসংগঠনকে এই যাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমন্ত্রণ গ্রহণ করে দেশের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি ও গণসংগঠন শুরু থেকেই এই যাত্রার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অনেকের সন্দেহ ছিল, অনেকের নানা পুরানো অভিযোগ ছিল। গত দুই মাসে তা পাল্টেছে। কংগ্রেস কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলনের মিছিল অংশ নিচ্ছে যাত্রায়। প্রতিদিন স্থানীয় গণসংগঠনগুলো জমি সংক্রান্ত ইস্যুতে রাহুল গান্ধির সঙ্গে বৈঠক করছে। একদিন আত্মহত্যাকারী কৃষকের পরিবার তো অন্যদিন বিড়ি শ্রমিকরা। কোনোদিন দেবদাসী প্রথার শিকার নারীরা আবার কোনোদিন উন্নয়ন ও মুক্ত সমাজের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা আদিবাসী গোষ্ঠী। কোনোদিন মদ নিষিদ্ধ করতে চাওয়া আন্দোলনের প্রতিনিধি আবার কখনও বিকল্প শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সংগঠন। এই যাত্রা কত স্বপ্নকে যুক্ত করছে, বেদনার সঙ্গে বেদনাকে যুক্ত করছে। গত কয়েকদিনে এই নদীতে অনেক স্রোত এসে মিশছে, ছোট ছোট যাত্রা এসে মিশছে, বিশিষ্ট নাগরিকরা যুক্ত হচ্ছেন। রাহুল গান্ধির সঙ্গে হাঁটছেন প্রশান্ত ভূষণ, যিনি একসময় দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছিলেন।
এসেছেন নৌবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান অ্যাডমিরাল রামদাস। অন্যদিকে চলচ্চিত্র জগতের তারকা পূজা ভাট এবং সুশান্ত সিংও অংশ নিয়েছেন সফরে। কংগ্রেস শাসনের জরুরি অবস্থার সময় ১৯ মাস জেলে কাটিয়েছেন এমন সংগ্রামীরা পথ চলছেন, কোনো দলীয় সংগঠনের যুক্ত না থাকা যুবক-যুবতীরাও চলেছেন। ধীরে ধীরে সরু স্রোত এখন নদীতে পরিণত হচ্ছে। তাহলে কি দেশের মেজাজ পাল্টেছে? ঘৃণার রাজনীতি কি বন্ধ হবে? গুজরাট ও হিমাচলের নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব পড়বে? বর্তমানে এমন কোনো দীর্ঘমেয়াদী বা তাৎক্ষণিক প্রত্যাশা করা ভুল হবে। আপাতত শুধু এটুকু বলা উচিত, দেশে বিরাজমান অন্ধকার, হতাশা ও অবসাদের পরিবেশে ফাটল দেখা দিয়েছে। আগে কোনো বিকল্প ছিল না, বরং ছিল নীরবতা, একাকীত্ব ও ভয়ের প্রাচীর। অন্ধকারে আলোর রশ্মি দেখা যাচ্ছে। ভোপালে এই পদযাত্রা নিয়ে আয়োজিত একটি সেমিনারে বামপন্থী চিন্তাবিদ এবং কর্মী বাদল সরোজ বলেন, “ভারত জোড়ো যাত্রা আমাদের সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা”। যখন কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে আপনি এই যাত্রা থেকে কী পেয়েছেন, আমি রঘুবীর সহায়ের বিখ্যাত কবিতা ‘আত্মহত্যার বিরুদ্ধে’ থেকে এই লাইনগুলি উদ্ধৃত করি: “আমি কথা বললে কিছু হবে ক্ষমতার জাদু ভাঙা উচিত নয় এক কাপুরুষ আমার মধ্যে ভাঙতে থাকবে”। (সমাপ্ত)
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: শ্রেয়ণ
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct