উপহার
গোলাম মোস্তাফা মুনু
আরিনা বেওয়া বিয়ে বাড়ি চলে আসে। বিয়ের তিনদিন পূর্বেই। একটু আগামই তাকে ডাকা হয়েছে। কাপড় চোপড় এবং ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার দায়িত্ব যেন আরিনা বেওয়ার উপরেই রয়েছে। বিয়ে বাড়িতে এসেই সে কাজকর্ম শুরু করে দেয়। বিয়ে বাড়ির কর্তা আরিনা বেওয়ার দূর সম্পর্কের শ্বশুর মশাই। কর্তার ছোট মেয়ের বিয়ে। বড় ধুমধাম করেই হচ্ছে। বিয়ের তিন চার দিন আগে থেকেই বিয়ে বাড়ির পুরুষ ও মহিলা সকলেই ব্যস্ত। তবে সবার চেয়ে যেন বেশি ব্যস্ত আরিনা বেওয়া। বিয়ের দিন উপস্থিত। ফজরের নামাজের পর পরই কাজকর্ম শুরু করে দেয় আরিনা বেওয়া। তার পরে পরে বাড়ির অন্যান্য পুরুষ এবং মহিলারাও নিজের নিজের দায়িত্ব পালনে লেগে যায়। আরিনার কাজ একরকম নয়। সব কাজেই তাকে হাত দিতে হয়। কখনও কর্তা তাকে ডাক দেন, ‘আরিনা! এদিকে আসো তো। এই জায়গাটা নোংরা হয়ে আছে, ভেজা কাপড়ে মুছে দাও।’ আরিনা ডাক পাওয়ার সাথে সাথেই সেখানে এসে কর্তার নির্দেশ পালন করে। কখনও গিন্নি ডাক দেন, ‘আরিনা! বালতিটার নোংরা জল বাড়ির বাইরে ফেলে আসো তো।’ কখনও ছেলে ডাক দেয়, ‘ভাবি! এখানে কয়েকটা এঁটো থালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, ওখানে এক জায়গায় রেখে আসো।’রান্না করার ভাড়াটে লোকেরাও মাঝে মাঝে আরিনা বেওয়াকে ডেকে কিছু কাজকর্ম করিয়ে নেয়। আরিনা কারও নির্দেশ অমান্য করে না। এভাবে কাজকর্ম করতে করতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবুও মনে এক রকম সুখ নিয়ে খেটেই চলে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে। তখনও আরিনা বেওয়া দুপুরের খাবার খায়নি। তার মনের ইচ্ছা, অন্তত আজকে একবার তাকে কেউ খেতে বলুক। কিন্তু তার অন্তরের বাসনা অন্তরেই থেকে গেছে। কেউই তাকে খেতে বলেনি। সবাই তাকে শুধু কাজই দিয়ে গেছে।
আসরের নামাজের পর। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে নিজের তাগিদেই আরিনা খেতে শুরু করে। খেতে খেতেও দু-চারবার কাজের ডাক পড়ে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে সে আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। দূরদূরান্ত থেকে যেসব আত্মীয়-স্বজন বিয়ে খেতে এসেছে তারা প্রত্যেকেই উপহার হিসেবে কিছু না কিছু এনেছে। কেউ এনেছে শাড়ি, কেউ লুঙ্গি, কেউ শাড়ি-লুঙ্গি দুটোই, আবার কেউ তৈজসপত্র ইত্যাদি। আরিনা বেওয়ার আর্থিক সমস্যা হলেও সে একটা ভালো শাড়ি এনেছে। বিয়ের একদিন পর। বিকাল বেলা। দূরের কাছের সব আত্মীয় বিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় নেবে। এমন সময় কর্তা এবং গিন্নি সকলকে একে একে ঘরে ডেকে কাউকে শাড়ি আবার কাউকে লুঙ্গি পছন্দ মত নিতে বলেন। ঘরের মধ্যে অনেকগুলি শাড়ি ও লুঙ্গি রাখা আছে। আত্মীয়রা একে একে গিয়ে নিজের পছন্দমত শাড়ি বা লুঙ্গি নিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে আসে। ঘরের বাইরে বারান্দার এক কোণে বসে ডাকের অপেক্ষা করছে আরিনা বেওয়াও। ডাক পেলে সেও নিজের পছন্দমত একটি শাড়ি নেবে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর তার ডাক আসে। মনের আনন্দে সে পা চালিয়ে ঘরের ভেতরে যায়। গিয়ে দেখে, মেঝেতে রাখা আছে একটি শাড়ি; যেটি কেউই পছন্দ করেনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct