“একজনকে হত্যার দায়ে ৪৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা” ( আপনজন, ২৬/১১/২০২২, পৃষ্ঠা-৫ ) খবর প্রসঙ্গে এই চিঠি। একজন মানুষকে স্রেফ সন্দেহের বশে দোষী বা অপরাধী ধরে নিয়ে বহুজন মিলে পিটিয়ে মেরে ফেলা বা চরমভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার ঘটনা বাংলা তথা সমগ্র ভারতে, বিশেষত উত্তর ভারতে আকছারই ঘটে থাকে। যারা একজনের ওপর চড়াও হয়ে মনের সুখে তাকে মারতে থাকে,এদেশে তারা ভালোই জানে যে, এতজন মিলে মারছি, অতএব শাস্তির কোনও ভয় নেই। সত্যিই তো, এদেশে গণপ্রহারের ঘটনা এত হয় কিন্তু ক’টা ক্ষেত্রে প্রহারকারীদের শাস্তি হয় ? গণধোলাইয়ের ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের এই পরিস্থিতির পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার আলজেরিয়া দেশটির ছবি একবার দেখা যাক।দেশটির কোনও এক অঞ্চলে একবার জোরালো দাবানলের সৃষ্টি হয়েছিল। যেভাবেই হোক, ভুল রটে গিয়েছিল যে, ঐ দাবানলের জন্য দায়ী ৩৮ বছর বয়সী যুবক “জামেল বেন ইসমাইল”। তিনি নাকি জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। উন্মত্ত জনতা জামেলকে পিটিয়ে মেরেছিল। প্রথমত ভুল সন্দেহ, দ্বিতীয়ত জামেল অপরাধী হলেও, তাঁর বিচার ও শাস্তি প্রদানের জন্য আছে প্রশাসন এবং আদালত। বিচার আর শাস্তি দেওয়ার কাজটা জনতার নয়। একদল প্রহারকারীকে গ্রেফতার করে মাত্র এক বছরের মধ্যে বিচার শেষ করে ৪৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আলজেরিয় আদালত। বিচার বিভাগের এই অতি দ্রুত এবং কড়া পদক্ষেপে মানুষের মনে ভয় জন্মাবে, ভবিষ্যতে কাউকে আর গ্ণঢোলাই দেওয়ার প্রবণতা আসবেনা।
কিন্তু ভারতবর্ষে যদি একজনকে হত্যার দায়ে ৪৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়? এখানে অনেক তথাকথিত ‘ আঁতেল ‘লোক আছেন, যাঁরা বলবেন, ‘একটা প্রাণ নেওয়ার দায়ে কি এতগুলো প্রাণ নেওয়া যায়’? অনেক মহাজ্ঞানী বলবেন, ‘একটা প্রাণের মূল্য বেশি না দশটা প্রাণের’ ? যাঁরা এই জাতীয় ধারণার অধিকারী, তাঁরা ভেবে দেখেন না যে, ১০ জনের হাতে নিহত ব্যক্তিটি যদি তিনি নিজে হতেন ? এই জাতীয় মানসিকতার জন্য ভারতবর্ষে গ্ণঢোলাইয়ের মত জঘন্য সামাজিক অপরাধের শাস্তি প্রায় হয় না বললেই চলে। ফলস্বরূপ এক শ্রেণীর মানুষ গণঢোলাইকে তাদের সামাজিক অধিকার বলে ধরে নিয়েছে। হৈ,হৈ করে ছুটে এসে, একজনকে অনেকে মিলে পিটিয়ে তারা আনন্দ পায়, বোঝেনা যে, এই আনন্দ কতটা পৈশাচিক ? কবে হবে এই দেশের মানুষের বোধোদয়?
সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct