একদিকে প্রধানমন্ত্রী যিনি ফ্লাইওভারে ২০ মিনিটের জন্য আটকে থাকা সত্ত্বেও নিজের দলের সমর্থকদের জন্য জানালার কাঁচ নামিয়ে দেন না, অন্যদিকে রাহুল গান্ধি প্রত্যেক শিশু, বৃদ্ধ এবং যুবককে আলিঙ্গন করছেন। অপরিচিতের হাত ধরে হাঁটছেন, দৌড়চ্ছেন, খেলছেন। ১০০ জনের বেশি ‘ভারতযাত্রী’ রাহুল গান্ধির সঙ্গে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত পথ হাঁটছেন। শত শত ‘প্রদেশযাত্রী’ বিভিন্ন রাজ্যের শুরু থেকে সীমান্তের শেষ পর্যন্ত সফর করছেন। হাজার হাজার কর্মী পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। এ নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ প্রথম কিস্তি।
যখন ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু হয়েছিল, তখন বন্ধুরা ফোন করে বলতেন, “কেন আপনি রাহুল গান্ধির সফরে শামিল হচ্ছেন?” এখন দুই মাস পেরিয়ে তাঁরা ফোন করে জানতে চান: “ভারত জোড়ো যাত্রায় কোথায় যোগ দেবেন? কীভাবে যোগ দেবেন?” গত দুই মাসে ভারত জোড়ো যাত্রার প্রভাবেই এই পরিবর্তন এসেছে। প্রায় ৭০ দিন এবং ১৮০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি হাঁটার পর এখন পর্যন্ত এই যাত্রা তার অর্ধেক দূরত্ব অতিক্রম করেছে। তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রা কেরালা, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা হয়ে এখন মহারাষ্ট্র পেরিয়ে মধ্যপ্রদেশে পৌঁছেছে।স্পষ্টতই, কংগ্রেস পার্টি আয়োজিত এই যাত্রায় কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। ১০০ জনের বেশি ‘ভারতযাত্রী’ রাহুল গান্ধির সঙ্গে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত পথ হাঁটছেন। শত শত ‘প্রদেশযাত্রী’ বিভিন্ন রাজ্যের শুরু থেকে সীমান্তের শেষ পর্যন্ত সফর করছেন। আর প্রতিদিন হাজার হাজার স্থানীয় কর্মী পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। প্রতিটি রাজ্যে দু-এক জায়গায় বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে কিছু ইতিবাচক কাজ পেয়েছে কংগ্রেস সংগঠন। বহুদিন পর রাস্তায় নেমেছেন কংগ্রেস কর্মীরা। এই নতুন কর্মসূচি থেকে একটা নতুন আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, আমাদের নিজেদের নেতৃত্বে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এত তাড়াতাড়ি কংগ্রেসের পুনর্জন্ম সম্পর্কে কথা বলা বাড়াবাড়ি হবে, তবে কিছু মৌলিক পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এই দুই মাসে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে রাহুল গান্ধির ভাবমূর্তিতে। যখন যাত্রা শুরু হল, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “আপনি রাস্তায় হাঁটতে থাকবেন, কিন্তু রাহুল গান্ধি কয়েকদিন পর গাড়িতে চড়ে বিদেশে চলে যাবেন।” পাপ্পুর ছবি রাহুল গান্ধির ব্যক্তিত্বকে পুরোপুরি ঢেকে দিয়েছিল। গত ১৫ বছরে যে রাহুল গান্ধিকে আমি চিনতাম তিনি একজন দয়ালু, গম্ভীর, অকপট এবং অনুসন্ধানী ব্যক্তি। তাঁর মধ্যে কোনো ছলনা বা কৃত্রিমতা নেই। সাংবিধানিক মূল্যবোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, শেষতম মানুষটির জন্য উদ্বিগ্ন এবং সুবিধাবাদী রাজনীতি এড়িয়ে চলা এক ব্যক্তি। এমনকি যখন আমি কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করেছিলাম এবং রাস্তায় নেমে তার সরকারের বিরোধিতা করেছিলাম, তখনও রাহুল গান্ধির ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমার ধারণার কোনো পরিবর্তন হয়নি। রাহুল গান্ধিকে পাপ্পু বানানো মিডিয়া ও রাজনৈতিক প্রচার কিন্তু অন্য ছবি তুলে ধরেছে জনগণের কাছে। একজন সাধারণ মানুষ যিনি তাঁকে চিনতেন না, তিনি ধরে নিতেন যে রাহুল গান্ধি কোনো রাজপরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের নেতাদের মতোই নির্বোধ, দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন, বিবেকহীন এবং অহংকারী। এদেশের ধুলো দু’দিনও সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু এখন দুই মাস ধরে দেশের মানুষ দেখছে একই রাহুল গান্ধিকে, যিনি এদেশের রুক্ষ রাস্তায় হাঁটছেন, তাঁর ‘রাজনৈতিক তপস্যার’ সংকল্প পূরণ করছেন। একদিকে প্রধানমন্ত্রী যিনি ফ্লাইওভারে ২০ মিনিটের জন্য আটকে থাকা সত্ত্বেও নিজের দলের সমর্থকদের জন্য জানালার কাঁচ নামিয়ে দেন না, অন্যদিকে রাহুল গান্ধি প্রত্যেক শিশু, বৃদ্ধ এবং যুবককে আলিঙ্গন করছেন। অপরিচিতের হাত ধরে হাঁটছেন, দৌড়চ্ছেন, খেলছেন।
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: শ্রেয়ণ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct