সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: একুশের পুনঃরাবৃত্তিই এবার ঘটতে চলেছে তেইশের বুকে। শাসক দল সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কোন বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের কে প্রার্থী হবেন, কারা কারা বাদ পড়বেন আর কারা ফের টিকিট পাবেন তার তালিকা অনেকটাই তৈরি করে দিয়েছিল ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক। সেই তালিকা তৈরি হয়েছিল তৃণমূল বিধায়কদের বিগত বছরগুলির কার্যকলাপ, মানুষের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা, এলাকাবাসীর কাছে তাঁর ইমেজ, দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য, ভাবমূর্তির জোর এই সব দেখে। তার জেরেই বাদ পড়েছিলেন দলের বেশ কিছু বর্ষীয়াণ বিধায়ক। পুরানোদের সরিয়ে আবার বেশ কিছু আসনে নতুন মুখ তুলেও আনা হয়। আবার সব ক্ষেত্রে যে আইপ্যাকের সুপারিশ কাজ করেছে এমনও নয়। কেননা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে শেষ কথা বলেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারেও সেই ছবিটা দেখা যেতে পারে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আবাস যোজনার ক্ষোভ কার্যত বলে দিচ্ছে জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত এলাকায় ঘাসফুল কিছুটা হলেও ধাক্কা খেতে পারে। নেপথ্যে একশ্রেণির পঞ্চায়েত সদস্যের দুর্নীতি। সেই ধাক্কা যাতে দলের গায়ে না লাগে তার জন্য সময় থাকতে থাকতেই পদক্ষেপ নিচ্ছে জোড়াফুল। দলের দুর্নীতিগ্রস্থ পঞ্চায়েত সদস্য ও মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারানো দলীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের খুঁজে বের করে তা৬দের চিহ্নিত করার কাজ প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাককেই দিয়েছে বাংলার শাসক দল। সেই সংস্থার প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তার জেরে তৃণমূলের হাতে আগে থেকে যে তালিকা প্রস্তুত হয়ে ছিল সেই প্রার্থী তালিকা এখন অনেকটাই বদলে যেতে চলেছে বলে জোড়াফুল সূত্রে জানা গিয়েছে। এমনিতেই তৃণমূল এবার মহিলাদের সব থেকে বেশি টিকিট দিতে চলেছে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। ৫ বছর আগে যাদের টিকিট দেওয়া হয়েছিল এবারেও যে তাঁরা সবাই টিকিট পাবেন তা কিন্তু একদমই নয়। বিধানসভা নির্বাচনের মতোই ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূলের প্রার্থী কারা হবেন আর কারা হবেন না সেই বিষয়েও ছাপ ফেলতে চলেছেন প্রশান্ত কিশোর।জানা গিয়েছে, অনুব্রতহীন বীরভূম, বিজেপির গড় হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠা পুরুলিয়া এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ নদিয়া জেলার প্রার্থী তালিকা এখন আইপ্যাকের রিপোর্ট দেখে চূড়ান্ত করার পথে হাঁটা দিয়েছে তৃণমূল। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রার্থী তালিকাতেও। অধিকারীদের এবার জোর ধাক্কা দিতে চায় বাংলার শাসক দল। তাই সেখানে ভীষণ রকম জোর দেওয়া হচ্ছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী বেছে নিতে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদা ও উত্তর দিনাজপুর জেলাতেই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে যেখানে খুব ভাল উন্নয়ন হয়েছে সেখানে যদি আগেরবারের জয়ীদের আসন সংরক্ষণের গেরোয় না পড়ে তাহলে আগেকার প্রার্থীদেরই এবারেও বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় আইপ্যাকের ঝাড়াইবাছাই তৃণমূলকে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঠিক কতটা অ্যাডভান্টেজ দেয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct