আপনজন ডেস্ক: ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস। এই উপলক্ষ্যে আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের ব্যবস্থাপনায়, বাংলা সাহিত্য ডট.ইন এর যান্ত্রিক সহায়তায় গত ২৪-২৫ ডিসেম্বর 2022 এ অনুষ্ঠিত হল ‘আরবি : ঐতিহ্য-নির্মাণের পরম্পরা-আজকের বাস্তবতা’ শীর্ষক দুই দিনের অন্তর্জাতিক স্তরের আন্তর্জালিক আলোচনাচক্র। আলোচনাচক্রে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আমজাদ হোসেন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মীর রেজাউল করিম। আলোচনার সূচনায় সূচক ভাষণ দেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শাহনওয়াজ আলি রাইহান। প্রথম দিনে বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী হাসান ও সরকারি মহিলা ডিগ্রি কলেজের আরবি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মাতিন। তাঁরা বক্তব্য রাখেন ‘ভাষার কথা, আরবি ভাষার কথা’ এবং ‘আরবি সাহিত্যের সেকাল একাল’ বিষয়ে। ২৫ ডিসেম্বরের আলোচ্য ও আলোচক ছিলেন যথাক্রমে ‘আরবি ভাষায় জ্ঞানচর্চার পরম্পরা’--ইফতিখারুল আলম মাসউদ (অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়); ‘আজকের ভাষিক বাস্তবতা ও আরবি ভাষীদের ভূমিকা’-মাহাদি হাসান (গবেষক, ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র); আরবি ভাষায় উচ্চতর পড়াশুনা-গবেষণা; পাশ্চাত্যে, প্রাচ্যে’-আরিফ রব্বানী (স্নাতকোত্তর, লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ড); ‘জীবন জীবিকার মাধ্যম আরবি: সমস্যা ও সম্ভাবনার সমীকরণ’-সাইদুর রহমান (অধ্যাপক আরবি বিভাগ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়)। সভায় বক্তাদের বক্তব্যের ব্যাপ্তি, গভীরতা এবং দর্শক-শ্রোতাদের উপস্থিতি ও সক্রিয়তা ছিল অত্যন্ত সন্তোষজনক। তাঁদের সমন্বিত বক্তব্যের নির্যাস : আরবি পবিত্র কুরআন এর ভাষা, সেইসূত্রে মুসলমান সমাজ আরবিকে আলাদা করে সম্ভ্রম করবেন নিশ্চয়ই, কিন্তু মনে রাখতে হবে কেবল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিংড়ে দিয়ে আজ আমরা আরবি ভাষার প্রতি আমাদের কর্তব্য সম্পন্ন করতে পারি না। পরিবর্তিত সমাজবাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যবহারিক জীবনে আরিব ভাষার সর্বাত্মকচর্চা করতে হবে;মুসলমানদের মধ্যে যার বিশেষ অভাব রয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার মানুষ যারা সকলেই ইসলামধর্মী নন তাঁরা বরং এক্ষেত্রে অনেক বেশি দক্ষতা দেখাচ্ছেন। ইউরোপ, আমেরিকার নানা দেশে অজস্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বা ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ রয়েছে; সেখানে উচ্চতর পড়াশুনা থেকে শুরু করে অসামান্য সব গেবষণাকর্ম সম্পন্ন হচ্ছে। আমাদের দেশের আরবি বা ইসলামিক স্টাডিজ পড়ুয়ারা কোনোরকম হীনমন্যতায় না ভুগে গর্বের সঙ্গে এইসব বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারে এবং অক্সফোর্ড, কেম্ব্রিজ, হাবার্ড এর মতো পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করে প্রস্তুত করতে পারে আর এক বাস্তবতার ভিত্তি। তাছাড়া এখন পৃথিবীর প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলে; কমবেশি পঁচিশটি দেশের সরকারি ভাষা আরবি। আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছে যেসব পড়ুয়া তাদের প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে ওইসব দেশে; বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি উচ্চবেতন সহযোগে তাদেরকে নানাবিধ কাজে নিয়োগ করছে। কাজেই হীনমন্যতার কোনো জায়গা নেই। প্রত্যয়ী অবস্থানই এক্ষেত্রে সাফল্যের প্রথম সোপান। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘ তাদের ষষ্ঠ অফিসিয়াল ভাষা হিসাবে আরবি ভাষাকে স্বীকৃতি দেয় এবং তারই সূত্রে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ‘১৮ ডিসেম্বর’ আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসাবে মান্যতা পায়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct