সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: সারা বছর ভর দৌড়াদৌড়ি। চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া। আক্রমণের পর আক্রমণ। একের পর এক সভা। দুই নেতার বছর ভরের কর্মসূচি দেখলে তেমনটাই মনে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে যায় যে বছর শেষে নিট রেজাল্ট কী? কে এগোলেন আর কেই বা পিছোলেন? রাজ্যের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত জিতলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক। সেই সঙ্গে বিস্তর জমি হারালেন বাংলার বিরোধী দলনেতা। নজরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী । ২০২২ সালের রাজনৈতিক গ্রাফ বলছে রাজ্য রাজনীতিতে ওজন বেড়েছে অভিষেকের। একই সঙ্গে কদর কমেছে শুভেন্দুর। একজন খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিরোধী পক্ষকে চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন, দলের জনপ্রতিনিধিদের ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেন, মাঝে মধ্যে দলের দরজাটা খুলেও দেন জার্সি বদলের জন্য, ভিন রাজ্যে দলের জমি দখলে মাঠেও নেমে পড়েন। অন্যজন, দলের নেতাদের কাছেই অন্দরে-বাহিরে সমালোচিত হন। ভিন রাজ্যে কদরও পান না, ডাকও আসে না। দলের প্রার্থীদের ভোটেও জেতাতে পারেন না। কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ঘরের বাইরে পাও রাখতে পারেন না।অভিষেক এখন তৃণমূলের নম্বর টু। বঙ্গ বিজেপিতে শুভেন্দু এখনও তা হয়ে উঠতে পারেননি। মাঝেমধ্যে তাঁর প্রোমোশনের সম্ভাবনা রয়েছে এমন খবর শোনা যায় বটে, তবে তা আর বাস্তবে দেখা যায় না। অভিষেককে ভয় পান দলের নেতারা, ভালবাসেন নীচুতলার কর্মীরা। শুভেন্দুকে ঘিরে নীচুতলার কর্মীরাই দ্বিধাভক্ত। বিজেপির আদি কর্মীদের কাছে তিনি চোখের বিষ। আর নব্যরা ব্যস্ত থাকে তাঁর সভা ভরাতে। বিজেপির আখেরে লাভ কিছুই হয় না। অভিষেকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের এজেন্সিগুলি বার বার হানাদারি চালিয়েছে, কিন্তু এখনও অবধি তাঁকে বাগে পায়নি, তাঁরা মাথা নত করতেও পারেনি। বিপরীতে শুভেন্দুকে বার বার দেখা গিয়েছে আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতে। অভিষেক যখন খোলা মাঠের যুদ্ধে জনতার রায়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তখন শুভেন্দু কথায় কথায় কলকাতা হাইকোর্টে একের পর এক মামলা ঠুকেছেন। যেন জনতার ওপর থেকে তাঁর আস্থাটাই উঠে গিয়েছে, ভরসা একমাত্র আদালতে। এই ছবিটাই বলে দেয় তাঁর জনবিচ্ছিন্নতা।অভিষেকের কদর বেশ ভালই রয়েছে সংখ্যালঘু মহলে। সেখানে শুভেন্দুর ছিঁটেফোঁটা গ্রহণযোগ্যতা নেই বাংলার সংখ্যালঘু সমাজে। অভিষেকের চরিত্র নিয়ে এখনও অবধি না কেউ কোনও অভিযোগ তুলতে পেরেছেন না তাঁর দিকে কেউ কোনও আঙুল তুলতে পেরেছে। চলতি বছরেই কিন্তু শুভেন্দুর এক মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের তরফেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বার বার ‘সমকামিতা’র অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেখানেও শুভেন্দু না কোনও যোগ্য জবাব দিতে পেরেছেন না আদালতে কিছু করে উঠতে পেরেছেন। যুদ্ধ চলছে দুই নেতার। আগামী দিনেও তা চলবে। কিন্তু রাজ্য রাজনীতির পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতির ময়দানেও শুভেন্দুকে বিস্তর পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct