আপনজন ডেস্ক: প্রায় সময় অনেকের গলা-বুক জ্বালাপোড়া করে। এতে মুখে টক বা ঢেঁকুর ওঠে, হজমের সমস্যা হয়। হঠাৎ রিচ খাবার বেশি খেলে এমন হয়। এক্ষেত্রে পেটের ভেতর চরম মাত্রায় অস্বস্থি কাজ করে। এটাকে অনেকে সাধারণ গ্যাসের সমস্যা বলে মনে করেন। আসলে এটি কোনো বংশগত রোগ নয়। আসলে মুখ থেকে পাকস্থলীতে সংযোগ রক্ষা করে যে নালি তাকে খাদ্যনালি বা ইসোফেগাস বলে। খাদ্যনালির শেষ প্রান্তে ও পাকস্থলীর শুরুতে পেশিবহুল একটি ভাল্ব বা কপাটিকা থাকে। এ কপাটিকার কাজ হচ্ছে খাদ্যনালি থেকে খাবার এলে তা খুলে গিয়ে পাকস্থলিতে প্রবেশ করানো। এরপর দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে হজমের জন্য সজোরে সংকুচিত হয়। কিন্তু ভাল্ব দুর্বল হলে বা কোনো কারণে কাজ করতে অক্ষম হলে খাবার ওপরে উঠে আসে। ফলে পাকস্থলী থেকে উল্টো পথে খাবার ও পাকস্থলীতে অবস্থিত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং পিত্তরস খাদ্যনালিতে অর্থাৎ ওপরে উঠে আসে। ফলে হজম প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে। এটিই অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা রিগারজিটেশন। এর ফলে গলা-বুক জ্বালাপোড়া করে। কোনো ব্যক্তির অ্যাসিড রিফ্লাক্স যদি সপ্তাহে দুদিন বা তার বেশি হয় তখন রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গলা-বুক জ্বালাপোড়া করার প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে যারা স্থূলকায় বা শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। আরেকটি কারণ হচ্ছে যাদের জন্মগতভাবেই এ কপাটিকা বা ভাল্বের গঠন দুর্বল। সঠিক ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্থ না হওয়াও এ রোগের কারণ। পেট ভরে খাওয়া বা মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া, খাবার তালিকায় বেশিরভাগ সময় চর্বি ও তেলজাতীয় খাবারের আধিক্য যাদের থাকে তাদের রিফ্লাক্স ডিজিজ হয়ে থাকে। খাওয়ার পরপরই জল খাওয়া, খাওয়ার পর পরই শুয়ে যাওয়া বা টাইট করে প্যান্টের বেল্ট বা পায়জামার গিঁট বাঁধা। এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল এবং যারা ধূমপান, অ্যালকোহল ও বেশি বেশি চা কফি পান করেন তাদের এ সমস্যার তীব্রতা বেশি হয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে পেট ভরে খাওয়া যাবে না, পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খালি রাখতে হবে। যখন পেটে চাপ বোধ করবেন বা অস্বস্তি বোধ হবে তখনোই খাবার গ্রহণ বন্ধ রাখতে হবে। খাওয়ার পরপরই জল পান করবেন না। কম করে খাওয়ার ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর জল গ্রহণ করুন। ঘরে তৈরি ফ্রেশ খাবার গ্রহণ করুন। তৈলাক্ত, ভাজা-পোড়া, মসলা ও চর্বিযুক্ত এবং গ্রিল খাবার পরিহার করুন। ধূমপান, অ্যালকোহল পান বন্ধ করুন। চা, কফিতে সমস্যা হলে তা গ্রহণ থেকেও বিরত থাকুন। অনেকের দুধ বা দুধজাতীয় খাবারে বা চকোলেটে এ সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে এ খাবার বাদ দিন। খাওয়ার পর পরই শুতে বা ঘুমাতে যাওয়া যাবে না কিংবা শারীরিক কোনো পরিশ্রম করবেন না। খাওয়ার আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাওয়া উচিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে তাই এ সাবধানতা মেনে চলুন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct