সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: দলেরই সমীক্ষায় বিপর্যয়ের ইঙ্গিত। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পবে না নরেন্দ্র মোদির দল। তবে আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থনে ফের সরকার গড়তে পারেন নরেন্দ্র মোদি। তবে বাংলায় ২০১৯ সালে প্রাপ্ত ১৮টি আসনের ১টিকেও আর সুরক্ষিত বলে মনে করছেন না গেরুয়া শিবিরের সমীক্ষকেরা। বাংলায় থাকা ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপির সমীক্ষকেরা অর্ধেক আসনকেই দুর্বল বলে চিহ্নিত করেছেন, অর্থাৎ যেখানে দল লড়াই করার মতো জায়গাতেই নেই। কিংবা পরাজয় নিশ্চিত। বাকি ২১টি আসনে লড়াই করার মতো অবস্থা থাকলেও সেখান থেকে আসন বার হবে কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত নন গেরুয়া শিবিরের সমীক্ষকেরা। আর এই রিপোর্ট সামনে আসার পরেই কার্যত বঙ্গ বিজেপি নেতাদের ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দলের অবস্থা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরার কারসাজি ফাঁস হয়ে গিয়েছে। আর তার জেরে রাতারাতি শাস্তিও নেমে এসেছে। বঙ্গ বিজেপির আর্থিক খরচে নজরদারি করতে তৈরি করে দেওয়া হল কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম। আর্থিক খরচের ক্ষেত্রেও রাজ্য বিজেপির ক্ষমতা অনেকখানি খর্ব করা হয়েছে বলেই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পেশ করা রিপোর্টে আগেই তুলে ধরা হয়েছিল বাংলায় ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে পদ্মশিবিরের বিপর্যয়ের সম্ভাবনা চিত্র। সেই ছবিটাই ফের ধরা পড়ল বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার রিপোর্টে। বাংলায় ২০১৯ সালে জেতা ১৮টি আসনের মধ্যে ১টি আসনও ধরে রাখা নিয়ে রীতিমত সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে ওই সমীক্ষায়। বাংলায় এখন কেন্দ্রের ৪জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছে। সেই ৪টি আসনেও জয় ২০২৪ সালে আসবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে। বর্তমানে লোকসভার আসন সংখ্যা ৫৪৩টি। দুর্বল হিসেবে যে আসনগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলির অধিকাংশ বাংলা, বিহার এবং মহারাষ্ট্রে। বিজেপির দুশ্চিন্তা মূলত এতেই। এই অবস্থায় বিজেপি একক ভাবে ২৭২ আসন যে পাবে না সেটা একপ্রকার নিশ্চিত। একই সঙ্গে এটাও কার্যত ফুটে উঠেছে যে, আগামী দিনে মোদি-মমতা দূরত্ব আরও কমবে, একে অপরের প্রতি নির্ভরতা বাড়বে, সেই সঙ্গে বাংলার প্রাপ্তি যোগ বাড়বে। ভাল থাকবেন বাংলার মানুষ। কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারেরই নানা প্রকল্পের সুযোগ পাবেন তাঁরা।তবে এই সমীক্ষার জেরে বিপদ বেড়েছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের। কেননা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলায় বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী বুঝেই অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে এবার রাশ টেনে ধরেছেন। এখন বাংলায় জেলায় জেলায় দলীয় সভাপতিদের মাসে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করে বেতন দেয়। কিন্তু গাড়ি ভাড়া ও তেল খরচ থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ সামলানো এই অর্থে সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের পক্ষে। আবার গাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে থাকার খরচ না পেয়ে ক্ষুব্ধ জোন ইনচার্জ ও জেলা ইনচার্জরাও। নিজেদের পকেট থেকে খরচ করেই কার্যত সংগঠনের কাজে তাদের ছুটতে হচ্ছে। এই অবস্থায় বঙ্গ বিজেপির নেতারা বার বার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাজে তদ্বির করেছিলেন বেতনের পরিমাণ বাড়াবার জন্য। কিন্তু সে গুড়ে বালি।উল্টে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই এবার বঙ্গ বিজেপির খরচের ক্ষেত্রে নজরদারির জন্য বসিয়ে দিল কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম। সেই টিমই এবার থেকে বঙ্গ বিজেপির যাবতীয় খরচের দেখভাল করবেন। যেখানে যেখানে ছাঁটাই করার প্রয়োজন বুঝবেন সেখানে সেখানে ছাঁটাই করতে তাঁরা পিছু পা হবেন না।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct