সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: শুরুতেই প্রশ্নের মুখে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০ ডিসেম্বর থেকে হাওড়াও নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে চালু হতে চলেছে দেশের ষষ্ঠ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। সেদিন সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত দিয়েই এই ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে চলেছে। আপাতত সপ্তাহে বুধবার বাদে বাকি ৬দিনই এই ট্রেনের পরিষেবা মিলবে। সেই উদ্বোধনী যাত্রার আগে সোমবার সকালে এই ট্রেনটিকেই চালানো হল হাওড়া ও নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে। রেলের পরিভাষায় একে ‘ট্রায়াল রান’ বলা হয়। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ এখনও জানায়নি যে ৩০ তারিখ ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও ঠিক কবে থেকে এই ট্রেনের নিয়মিত স্বাভাবিক পরিষেবা মিলবে। কিন্তু এদিনই ট্রেনটির ট্রায়াল রানের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে গেল যা নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত রেলের আধিকারিকেরা।জানা গিয়েছে, ট্রেনটির যাত্রা সময় সাড়ে ৭ ঘন্টা। সম্ভবত ১ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহে ৬ দিন ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে দুপুর ১টা ৫৫মিনিটে। ফিরতি পথে ট্রেনটি সেদিনই দুপুর ২টো ৫০মিনিটে ছেড়ে হাওড়া পৌঁছাবে রাত ১০টা ৫০মিনিটে। ভাড়া থাকবে আনুমানিক ১৭০০টাকা ও ২৮০০টাকা। প্রথমটি চেয়ার কারের এবং দ্বিতীয়টি এক্সিকিউটিভ সিটের। দুটি ভাড়াতেই ধরা থাকছে খাওয়ার খরচ। দুটি ক্ষেত্রেই দেওয়া হবে ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক। হয় ডাবের জল নয়তো শরবত। সকালের ট্রেনে যারা যাবেন তাঁরা ব্রেকফাস্ট হিসাবে পাবেন লুচি, আলুরদম ও মিষ্টি।অসঙ্গে চা অথবা কফি। বেলা বারোটায় লাঞ্চ। থাকবে বাসমতী পোলাও, চিকেন, আলুপোস্ত, মিষ্টি এবং আইসক্রিম। বিকেলে ফিরতি পথে স্ন্যাক্স হিসেবে দেওয়া হবে সিঙাড়া, কেক বা মিষ্টি। সঙ্গে চা বা কফি। রাতের ডিনারে মিলবে পোলাও, চিকেন, একটি সবজি এবং মিষ্টি বা আইসক্রিম।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ১৭০০টাকা বা ২৮০০ টাকা ভাড়ায় নিয়মিত ভাবে এই ট্রেন আদৌ যাত্রী পাবে তো? কেননা এর আগে হাওড়া ও ধানবাদের মধ্যে এসি ডবল ডেকার ট্রেন চালানো হয়েছিল যা যাত্রীর অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। হাওড়া ও নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে যে শতাব্দী এক্সপ্রেস ছিল সেটিতেও ভাল যাত্রী হত না। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পরিষেবা চালু করে দিলেও যে তাতে রাতারাতি যাত্রীর ঢেউ দেখা যাবে এমনটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর যদি যাত্রী না হয় তাহলে ট্রেনটির পরিষেবা কতদিন বজায় রাখবে দেশের সরকার? নাকি ২০২৪ সাল অবধি দৌড় করিয়ে ‘অশ্বথামা হত ইতি গজ’। মাঝখান থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেসের পরিষেবাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাহলে হাতে থাকল সেই রাতের ট্রেনগুলিই বা সকালের কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। রেলের অনেক আধিকারিকেরা তো জোর গলায় বলছেন, শুধুমাত্র কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের জন্য বন্দে ভারত পর্যাপ্ত যাত্রী পাবে না। কেননা ২টি ট্রেনের মধ্যে ছাড়ার সময়ের ফারাক খুবই কম হাওড়া বা কলকাতার দিক থেকে। প্রথম প্রথম অনেকেই এই ট্রেনে চাপবেন অভিজ্ঞতার জন্য। কিন্তু নিয়মিত কী তাঁরা এই ট্রেনের সাওয়ারি হবেন? সম্ভবত নয়। তার থেকেও বড় কথা, বাংলার খোলা প্রান্তর দিয়ে ঘন্টায় ১১০ বা ১৩০কিমি বেগে আদৌ ছুটতে পারবে তো বন্দে ভারত, যেখানে দেশের নানা প্রান্তে গরু বা মোষের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বন্দে ভারতের নাক-মুখ ভেঙে যাওয়ার বিস্তর নজীর রয়েছে! সাড়ে ৭ ঘন্টা বলে না বন্দে ভারত ৯ ঘন্টা সময় নিয়ে নেয়। যদিও সেটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন রেলের আধিকারিকদের একাংশ। তাঁরা গোটা বিষয়টিকে কার্যত মোদির ২৪’র গিমিক বলেই দেখছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct