সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বড়দিনের সকাল থেকে কলকাতা মহানগরী ছক্কা হাঁকাল। ময়দান থেকে ভিক্টোরিয়া আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে নিকো পার্ক সর্বত্র সকাল ১০ টা থেকেই মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। বড়দিনের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল রবিবারের ছুটির দিন। ফলে সকাল থেকেই ঠান্ডার প্রভাব কমতেই পরিবারকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন আপামর বাঙালি। পার্ক স্ট্রিটে দুপুর পর্যন্ত ভিড় বিশেষ না থাকলেও সূর্য পশ্চিমে ঢলার সঙ্গে সঙ্গে জনতার অভিমুখ হয় অ্যালেন পার্ক। তৎপর হয়ে ওঠে কলকাতা পুলিশও। ভিড় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে পথে নামেন খোদ পুলিশ কমিশনার বিনীত কুমার গোয়েল। স্পেশাল পুলিশ কমিশনার দময়ন্তী সেন নিজে বিশেষ দায়িত্বে ছিলেন পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে। কলকাতা পুলিশের লালবাজার কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী সকাল থেকেই ভিড়ের পরিসংখ্যানে ছক্কা হাঁকিয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল ও আলিপুর জেল মিউজিয়াম। দুপুর ১২ টার মধ্যে আলিপুর চিড়িয়াখানায় ভিড় লক্ষাধিক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ময়দান ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল এলাকায় ভিড়ের সংখ্যা বিকেল তিনটে নাগাদ গিয়ে দাঁড়িয়েছিল আড়াই লক্ষের কাছে। বিকেল ৫ টার পর থেকেই ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে। সন্ধ্যে সাড়ে ছটা থেকে ভিড় অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় পার্ক স্ট্রিটে মল্লিক বাজারমুখী যান চলাচল বন্ধ করে দেয় কলকাতা পুলিশ। সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলের ভিড় শেক্সপিয়ার সরণি এলাকা পেরিয়ে যে রূপ নেয়, তা দেখে অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারদের মন্তব্য রাত বারোটা বাজার আগেই পার্ক স্ট্রিটের বড়দিনের ভিড় নবমীর রাতকে টেক্কা দেবে।
এবার আসা যাক বিধাননগর কমিশনারেটের অন্তর্গত নিকো পার্ক ও ইকোপার্ক এবং সেন্ট্রাল পার্ক এলাকায়। বিধান নগর কমিশনারেটের হিসাব অনুযায়ী সব কটি জায়গাতেই গড়ে ভিড় ছিল ৭০ থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে । সকাল থেকেই সেখানে ভিড় বেড়েছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। পিছিয়ে ছিল না সায়েন্স সিটি। বড়দিনের সকাল থেকে দুপুর যত গড়িয়েছে ততই ঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে মানুষজন নিউটাউন,পার্ক স্টিট ও ধর্মতলামুখী হয়েছেন। পার্ক স্ট্রিটে ফ্লুরিসে কেকের স্বাদ নিতে ঢুকে পড়েছিলেন অনেকেই। আলিপুর চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার সামনে থমকে গিয়েছিল কচিকাঁচা থেকে বড়দের দৃষ্টি। দীর্ঘ দু বছরের করোনাকাল কাটিয়ে বড়দিনের কলকাতা মাথায় শান্তা ক্লজ টুপি পড়ে ফের বুঝিয়ে দিল ধর্ম যার যার তবে উৎসব কিন্তু সবার। আলিপুর চিড়িয়াখানায় ছোট হাতির খাঁচার সামনে যেমন ভিড় ছিল তেমনি শিম্পাঞ্জি বাবুকে দেখতে অথবা শীতের দুপুরে বাঘের খাঁচার সামনে থমকে গিয়েছিল কচিকাঁচা থেকে বড়দের দৃষ্টি। বড়দিনের সকালে আবার অনেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন কালীঘাট অথবা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। তবে যারা বহু আশা নিয়ে বড়দিনের দুপুরে ছুটে গিয়েছিলেন বিড়লা প্লানেটরিয়াম লাগোয়া সেন্ট পলস্ ক্যাথিডল চার্চে দরজা বন্ধ দেখে বাইরের প্রদর্শনী দেখে মন ভরিয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল তাদেরকে। নন্দন ,রবীন্দ্রসদন ,মোহরকুঞ্জ এসব এলাকাও কিন্তু ভিড়ের রেকর্ড থেকে পিছিয়ে ছিল না। দীর্ঘ দু বছরের করোনাকাল কাটিয়ে বড়দিনের কলকাতা মাথায় শান্তা ক্লজ টুপি পড়ে ফের বুঝিয়ে দিল ধর্ম যার যার তবে উৎসব কিন্তু সবার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct