মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: পাঠানদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বর্ধমানের মাটিতে শিয়া মুসলিমদেরও আগমন ঘটে এবং মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারের মধ্যে দিয়ে কিছু কিছু শিয়া মুসলিমের আগমন ঘটে। শরিফা বাদের প্রাচীন অর্থাৎ মধ্যযুগে একটি অঞ্চলের নাম “বাবুর বাগ”। আর” বাবুর বাগ”নাম থেকেই এখানকার মসজিদটির নাম হয়েছিল “বাবুর বাগ মসজিদ”। বাবু শব্দটি ফার্সি / তুর্কি শব্দ, তুর্কিতে “বা” অর্থ-” সহিত” এবং তুর্কী- “বু” শব্দের অর্থ” খুশবু”/” সুগন্ধ” । এবং ফার্সি-” বাগ” শব্দের অর্থ - “বাগান”/” উদ্যান”। সহজেই বুঝা যায়” সুগন্ধ ফুলের বাগান”। “বাবা” তুর্কি অর্থ থেকেই “বাবু” শব্দের উৎপত্তি, পার্সিতে “বাবা”অর্থ প্রকৃত “জ্ঞানী “/”ঈশ্বরের প্রিয়” অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই অঞ্চলটি শিয়া মুসলিমদের আধিপত্য ছিল তার নিদর্শন মসজিদ এবং তার পাশে ইমামবাড়া। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে “লর্ড কর্নওয়ালিস” চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করলে, বর্ধমানের জমিদার তেজ চাঁদ ওয়াকাফ্ এর সমস্ত সম্পত্তি নিজের জমিদারির মধ্যে হস্তগত করেনেন। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে গোলাপবাগ থেকে মুসলমানদের কোমল শায়ের এ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বাবুর বাগ থেকেও মুসলমানদের(যারা তখনো থেকে গিয়েছিল) বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে দেয়া হয়। “তারা বাগ” নামক স্থান থেকেও মুসলিম জনগণকে “নবাব হাটের” পিছনে ১০৮ মন্দিরের পুর্ব দিকে “দিঘির পাড়” নামক স্থানে স্থানান্তরিত করে দেয়া হয়,(দিঘির পাড়ে বসবাসকারীদের দলিল থেকে জানতে পারা যায়)।
এই সময় শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমগণ বেশিরভাগ ই “লখনো”/ লখনউ চলে যান, অল্পস্বল্প মানুষ দু চার ঘর “মসজিদ “ও ‘ঈমাম বড়া’কে বেষ্টন করে থেকে যান। শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ সুবে- বাংলায় যেখানে যেখানে ছিলেন ,সেখানেই একটি করে “ইমাম বড়া” লক্ষ্য করা যায়। এখানেও তার নিদর্শন আজও দেখতে পাওয়া যায়। মসজিদের ঠিক দক্ষিণে আজও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী “ইমাম বড়া” ও “বাবুর বাগ মসজিদ”- “লাখরাজ “সম্পত্তি অর্থাৎ নিস্কর খাজনা বলে উল্লেখ আছে। আজও পুরাতন মসজিদ ও নতুন মসজিদের দুটো ছবি দেখলেই সহজেই অনুমান করা যাবে কত প্রাচীন ছিল এই মসজিদ। প্রাচীন মসজিদের কাঠামো দেখলেই বুঝতে পারা যাবে যে ,এই মসজিদটি কত পুরাতন ছিল। মসজিদটির তিনটে গম্বুজ ,চারটি মিনার, সামনের দুটি লম্বা, পিছনের দুটি ছোট, এবং দু প্রান্তে দুটো ছোট গম্বুজ ছিলো। প্রাচীন খিলেনের কাজ, চুন-সুর্কির গাঁথনি, এবং ছোট ছোট ইটের ব্যবহার হয়েছিল, এবং তুর্কি স্থাপত্যের নিদর্শন ছোট দরজা ও ছোট ছোট জানালা, আনুমানিক বয়স প্রায় ৬০০ বছর। ১৯৭৮ সালে বন্যার জলে মসজিদের প্রাচীন স্থাপত্যের অনেক ক্ষতি সাধন হয়েছিল। এবং কিছু কিছু মেরামত করা হয়েছিল প্রয়োজন বোধে। এরপর ২০১৭-১৮ থেকে মসজিদের পুরো ভেঙে দিয়ে নতুন করে সংস্কার করা হয়, এবং ২০২০ সালে নতুন ত্রিতল মসজিদ কাজ শেষ হয়।এই মসজিদের তিন বিঘার মতন সম্পত্তি আছে, মসজিদের সামনে বেশ কয়েকটি দোকান এখনো মসজিদে আছে বাকি সম্পত্তি বেহাত হয়েছে। মসজিদের ঠিক সামনেই একটি বড় ফাঁকা জায়গা আছে যা গাড়ী পার্কিং ভাড়া দিয়ে মসজিদের কিছু রোজগার হয়। যা মসজিদ চালাতে খরচা করা যায়।১৯৭৫ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এবং ২০১৯ থেকে আজ পর্যন্ত এলাকার মানুষদের নিয়ে পরিচালন কমিটির মাধ্যমে মসজিদ পরিচালনা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct