আপনজন ডেস্ক: শনিবার ভারত জোড়ো যাত্রায় রাজধানী দিল্লির লালকেল্লার বাইরে কংগ্রেসের এক বিশাল সমাবেশে প্রবেশ করার সময় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী বলেছেন, প্রকৃত ইস্যু থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বিজেপি। অথচ, ঘৃণার বাজারে আমরা ভালোবাসার দোকান খুলেছি।’ শনিবার সকাল ছটায় হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস সদস্যরা ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ করতে করতে দিল্লি পৌঁছান। এ সম্পর্কে রাহুল বলেন, ‘বিজেপি-আরএসএস ক্রমাগত ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে। আমরা ছড়াচ্ছি ভালোবাসা। ওদের ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসাই আমাদের অস্ত্র।’
আজ শুরুতে রাহুলের যাত্রাসঙ্গী ছিলেন দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ,হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডা, কুমারী শৈলজা, রণদীপ সুরযেওয়ালাসহ অনেকে। কিছুক্ষণ পর যাত্রায় যোগ দেন সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর স্বামী রবার্ট ভদ্র। দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত বদরপুরে ভারত জোড়ো যাত্রা করে আসা দলীয় সদস্যদের দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অনিল চৌধুরী স্বাগত জানান। কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি হাজার হাজার সাধারণ মানুষও তাদের সঙ্গে হাঁটতে থাকেন। এ সময় কংগ্রেসের দলীয় ও জাতীয় পতাকা ওড়ানো হচ্ছিল। দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ২৩ কিলোমিটার ঘুরে বিকেলে নেতারা লাল কেল্লায় যাত্রা শেষ করেন। সেখানে রাহুল বলেন, কন্যাকুমারী থেকে দিল্লি পর্যন্ত শত শত কিলোমিটার হেঁটে যাওয়ার সময় তিনি দেশের কোথাও সহিংসতা বা ঘৃণা দেখেননি। তবে তিনি দেখতে পান যে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিগুলির নির্দেশে এটি সর্বদা টেলিভিশনে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রকৃত ইস্যু থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য টেলিভিশনের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমানের নামে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা, এটাই সত্য। তিনি আরও বলেন, ২৪ ঘণ্টা হিন্দু-মুসলিম করার পর তারা আপনার টাকা তুলে দেবে এবং আপনার সব বন্দর, বিমানবন্দর, রাস্তা ও অন্যান্য সম্পদ তাদের বন্ধুদের কাছে বিক্রি করে দেবে। তারা সব সময় আপনার মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। রাহুল বলেন, ভারত জোডো যাত্রার লক্ষ্য ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, সাম্প্রদায়িক ঘৃণা এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। লাল কেল্লার বাইরে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং দলের প্রাক্তন প্রধান সোনিয়া গান্ধী।
তার আগে রাহুলসহ শীর্ষ কংগ্রেস নেতারা মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। এই যাত্রা উপলক্ষে দিল্লি পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। যেসব রাস্তায় যানজটের আশঙ্কা আছে, সেগুলো এড়িয়ে বিকল্প পথে যান চলাচলের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি রাহুল গান্ধীকে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা মনসুখ মান্ডবীয় একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে ‘উদ্বেগজনক করোনা পরিস্থিতির’ উল্লেখ করে চলমান ভারত জোড়ো যাত্রায় কঠোরভাবে করোনাবিধি মানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা সম্ভব না হলে জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। ভারত জোড়ো যাত্রা কর্মসূচি তখন রাজস্থানে অবস্থান করছিল। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকেও সে চিঠিটি দেওয়া হয়েছিল। এ চিঠিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দেয়। রাহুলসহ অন্য কংগ্রেস নেতারা চিঠিটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই যাত্রায় মানুষের উপস্থিতি ও সমর্থন দেখে বিজেপি ভয় পেয়েছে। তাই তারা এভাবে ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধের পরিকল্পনা করছে। কোভিড এখানে অজুহাতমাত্র। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই চিঠি প্রসঙ্গে হরিয়ানায় রাহুল বলেছিলেন, ‘প্রকৃত ভারতের শক্তি ও সত্যের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি ভয় পেয়ে গেছে। তাই এই চিঠি।’ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিজেপি বহু রাজ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তারাও যাত্রা শুরু করেছে। তাদের কাউকেই কিন্তু যাত্রা বন্ধের চিঠি দেওয়া হয়নি। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ গত শুক্রবার বলেন, সবার জন্য সব ক্ষেত্রে করোনাবিধি বলবৎ হলে ভারত জোড়ো যাত্রীরাও তা মানবেন। শনিবার দিল্লি প্রবেশের পর রাহুলের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। তবে সোনিয়া গান্ধীসহ অনেকের মুখে মাস্ক ছিল। রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেছিলেন গত ৭ সেপ্টেম্বর, তামিলনাড়ু থেকে। ইতিমধ্যে এ যাত্রা সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে। আগামী রোববার থেকে আট দিন যাত্রায় বিরতি থাকবে। ৩ জানুয়ারি থেকে ফের যাত্রা শুরু হওয়ার কথা। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা ও পাঞ্জাব হয়ে যাত্রা শেষ হবে জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct