২০২২ সাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সাম্প্রতিক স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হচ্ছি। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) ভাষ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে বিশ্বে প্রতি রাতে ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে লাগাতারভাবে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মুখে ছিল ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৩৪ কোটি ৫০ লাখে, অর্থাৎ দ্বিগুণের বেশিতে পৌঁছেছে। আর অনাহার–অপুষ্টিতে মরতে বসা মানুষের সংখ্যা ৫ কোটিতে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী বছরটি নজিরবিহীন মাত্রার ক্ষুধার বছর হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবে। নতুন বছরের অাগাম আশঙ্কা নিয়ে লিখেছেন সুলতান বারাকাত ও লোগান কোসরানে।
২০২২ সাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সাম্প্রতিক স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হচ্ছি। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) ভাষ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে বিশ্বে প্রতি রাতে ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে লাগাতারভাবে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মুখে ছিল ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৩৪ কোটি ৫০ লাখে, অর্থাৎ দ্বিগুণের বেশিতে পৌঁছেছে। আর অনাহার–অপুষ্টিতে মরতে বসা মানুষের সংখ্যা ৫ কোটিতে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী বছরটি নজিরবিহীন মাত্রার ক্ষুধার বছর হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবে। এ সংকট একেবারে শূন্য থেকে পয়দা হয়নি। কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেনের যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত পরিণতি, বিঘ্নিত সরবরাহ শৃঙ্খল ও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি থেকে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ধীরে ধীরে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে পর্যাপ্ত খাবার জোগাতে অক্ষম করে ফেলছে। যদিও এই খাদ্যসংকট নিঃসন্দেহে বিশ্বব্যাপী, কিন্তু এটি সবাইকে একইভাবে প্রভাবিত করছে না। ইতিমধ্যে সংঘাত, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং চরম দারিদ্র্যের মধ্যে ভুগছে এমন কিছু দেশও সাম্প্রতিকতম এ সংকটের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মুখে পড়েছে। তারা এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—দশায় পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা (মেনা) অঞ্চলের কথা বলা যায়। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে খাদ্যনিরাপত্তাহীন দেশগুলোর মধ্যে থাকা সিরিয়া (গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্সে ১১৩তম) এবং ইয়েমেনের (১১১তম) মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এমনকি মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের আগেও এই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছিল। ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং মহামারি সারা বিশ্বের সরবরাহ শৃঙ্খলকে নষ্ট করেছে, যার কারণে প্রয়োজনীয় শস্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং পণ্যের দাম ও জ্বালানির ব্যয় নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। এটি মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা (মেনা) অঞ্চলজুড়ে সবচেয়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের সংকট তৈরি করেছে। ইয়েমেন ও লেবাননের মতো যে দেশগুলো ইতিমধ্যে সংঘাত বা অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিল, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমাদের এই বিশ্ব দিনকে দিন আগের চেয়ে অধিকতর মেরুকৃত হয়ে উঠছে। সামাজিক বিভেদ ও সংঘাত বাড়ছে। চলমান সংঘাতগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কথাবার্তা শুনে মনে হবে তারা তাদের প্রতিপক্ষদের নিশ্চিতভাবে পরাস্ত করার মাধ্যমে তাদের মিত্রদের খাদ্যঘাটতির মতো বড় সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে পারবে। কিন্তু আমরা বর্তমানে যে বৈশ্বিক খাদ্যসংকটের সম্মুখীন হচ্ছি, তা তাদের দাবিকে ভুল প্রমাণ করছে। আধুনিক বিশ্ব যে পারস্পরিক নির্ভরতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তা এ সংকট প্রমাণ করে দিয়েছে। এ সংকট আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, আমরা আর ‘আমরা বনাম তারা’ গোছের বাগাড়ম্বর চালিয়ে যেতে পারি না। কারণ, ‘আমাদের’ ভালো থাকা ‘তাদের’ কর্ম তৎপরতার ওপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। আমরা এমন একটি বিশ্বে বাস করছি, যেখানে পূর্ব ইউরোপের একটি সংঘাত মেনা অঞ্চলের ক্ষুধার মুখে ফেলে দিতে পারে। ফলে এ সংকট সমাধানের এবং জীবন রক্ষা করার উপায় হলো বৈশ্বিক সংহতি এবং সহযোগিতা বাড়ানো। সুতরাং ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য ও জ্বালানির বাজারে এ যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাব মোকাবিলায় জাতিসংঘের উচিত বিশ্বব্যাপী ট্রিপল নেক্সাস পদ্ধতি (মানবিক সহায়তা, উন্নয়ন ও শান্তি খাতের সম্মিলিত সক্রিয়তা) গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা প্রদর্শনকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখা। ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈতিক পরিণতি মোকাবিলা করতে জাতিসংঘের সব সংস্থা, প্রতিটি জাতীয় সরকার, সাহায্য সংস্থা এবং দাতাদের উচিত সমন্বয় ও সহযোগিতা করার চেষ্টা করা, যাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যার তাৎক্ষণিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারে এবং তাদের এ ধরনের র জন্য আরও স্থিতিস্থাপক হতে সাহায্য করতে পারে। লেখক সুলতান বারাকাত কাতার ফাউন্ডেশনের হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির (এইচবিকেইউ) কনফ্লিক্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ও লোগান কোসরানে এইচবিকেইউর একজন সহযোগী অধ্যাপক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct