জিয়াউল হক, চুঁচুড়া, আপনজন: চুঁচুড়ায় অবহেলায় বিপ্লবীদের স্মৃতিচিহ্ন। গান্ধীজি, চিত্তরঞ্জন দাশ, নজরুল ইসলাম একের পর এক মহীয়সীর পা পরেছে হুগলীর বিদ্যামন্দির ভবনে। আজ সেই ভবনই ইতিহাস। হুগলী ইমামবাড়ার সন্নিকটে ছিলো এই বিদ্যামন্দির ভবন। ১৯২০র দশকে সারা দেশে যখন ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তখনই ভূপতি মজুমদার, অধ্যাপক জ্যোতিষ চন্দ্র ঘোষ, হামিদুল হক, সিরাজুল হকের মত মহান বিপ্লবীদের প্রচেষ্টায় এই ভবন গড়ে ওঠে। এই ভবনে শিক্ষালাভ, শরীর চর্চার পাশাপাশি বিপ্লবীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতেন। সেজন্যই বিদ্যামন্দির ভবনে ইংরেজ প্রশাসনের ঘুম ছোটানো দেশনায়করা এই ভবনে আম্রয় নিয়েছিলেন। ১৯২৩সালে ধূমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতা প্রকাশের পর ব্রিটিশ সরকার কবিকে দেশদ্রোহের অপরাধে ১বছরের কারাদণ্ড দেয়। বিদ্যামন্দির ভবন থেকে কয়েকশো মিটার দূরে বর্তমান হুগরি জেলেই বন্দি ছিলেন তিনি। এই জেলেই অনশন শুরু করেন বিদ্রোহী কবি। অবশেষে বিশ্বকবির অনুরোধে সাড়া দিয়ে নজরুল অনশন ভঙ্গ করেন। নজরুলের সেই বন্দি থাকা কক্ষ আজও হুগলি জেলে সংরক্ষিত। এই জেল থেকে বেরিয়েই বিদ্রোহী কবি আশ্রয় নিয়েছিলেন বিদ্যামন্দির ভবনে। বিদ্যামন্দির ভবনের কাছেই একটি ঘরে সহধর্মিণী প্রমিলাদেবীকে নিয়ে উঠেছিলেন নজরুল। কবির প্রথম সন্তান কৃষ্ণ মহম্মদ এই ঘরেই জন্মগ্রহণ করেন। সেই সূত্রে বিদ্যামন্দির ভবনে কবির পরিবারের পা পড়েছিল। কিন্তু সেই ভবন আজ ধুলোয় মিশেছে। স্বাধীনতার ৭৫বর্ষ পূর্তির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আমরা। তাই আজ আমরা পৌঁছেছিলাম বিদ্যামন্দির ভবনে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল টিন দিয়ে ঘেরা ওই জায়গা। একাংশের উঁচু পাচিলের উপর থেকে কোনভাবে নজর দিলে দেখা যাবে পড়ে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। অর্থাৎ জমিটি প্রমোটারের হাতে পৌঁছে গেছে।এখানেই গড়ে উঠবে ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট। হুগলি-চুঁচুড়া পৌরসভার পৌরপ্রধানও একথা স্বীকার করলেন। বিদ্যামন্দির ভবনের সামনে তৈরি গান্ধীজির আবক্ষ মূর্তিটিও ফ্যাকাসে হয়ে পড়বে আবাসনের পাশে। উচ্চবিতবত মানুষদের বাসস্থান হয়ে উঠবে এই ভবন। তাদের মাঝেই চাপা পড়ে থাকবে বিপ্লবীদের ইতিহাস সমৃদ্ধ হুগলির বিদ্যামন্দির ভবন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct