মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: এই মসজিদটির মুঘল যুগে অর্থাৎ “সম্রাট আওরঙ্গজেবের” পৌত্র “শাহেনশাহ আজিম উস শান “ এই মসজিদটি ১১১১ হিজরী অর্থাৎ ১৬৯৭ -৯৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন। যেটা বর্ধমান শহরের পুরাতন চক পায়রা খানাতে অবস্থিত । মসজিদের ভিতর যে শিলালিপি আছে সেই শিলালিপি থেকে জানা যায় স্থাপনের সময় এবং মসজিদের নাম “জিমা” (আরবি শব্দ যার অর্থ - সক্রিয়, উদার, উপযুক্ত, গুরুতর ,দলপতি, শ্রেষ্ঠনেতা , অগ্রণী, ইত্যাদি) “জিমা মসজিদ” যা “শাহী জুম্মা মসজিদ” নামে খ্যাত।(শাহী অর্থাৎ রাজকীয় বা খানদানি)। কেন এমন নাম এর সন্ধানে পিছিয়ে যেতে হবে ১৬ ৯৬ খ্রিস্টাব্দে, মুঘল কর্মচারী বর্ধমানের জমিদার” কৃষ্ণ রাম রায়”বরদার জমিদার শোভা সিং এর হাতে নিহত হলেন, এবং শোভা সিংহ এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা ৭ দিন ধরে বর্ধমান শহরে প্রবেশ করে “কৃষ্ণ রাম রায়ের” পরিবারের ২৫ জনকে হত্যা করেন, কৃষ্ণ রাম রায়ের ৬ জন স্ত্রী সহ ১৩ জন অন্ত:পুর নারী জহর ব্রত অবলম্বন করে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত কৃষ্ণ রাম রায়ের পুত্র জগৎ রাম রায় সমস্ত ঘটনা মুঘল দরবারে জ্ঞাত করলেন, এমনকি স্ত্রীলোকের ছদ্মবেশে জাহাঙ্গীরনগর ( ঢাকায় )উপস্থিত হয়ে, নবাবদের (বাংলার সুবেদার ইব্রাহিম খাঁ) কে অবগত করেন। নবাব “নুর উল্লাহ খান” যশোর ,হুগলি, বর্ধমান, মেদিনাপুর, ও হিজলি র ফৌজদার ছিলেন, তিনি শোভাসিংকে তারা করলে শোভা সিং প্রাণভয়ে হুগলি দুর্গ ছেড়ে পালিয়ে যান, এবং চুঁচুড়া, চন্দননগরেও বাধা পেয়ে বর্ধমান ফিরে আসেন, এবং মদ্যপ অবস্তায় জমিদার “কৃষ্ণ রাম রায়ের” কন্যা সত্যবতীর ঘরে প্রবেশ করে তাকে বলপূর্বক ধর্ষণ করতে উদ্যত হলে কৌশলে সত্যবতী তাকে হত্যা করে। শোভা সিং-এর মৃত্যুর পর তার ভাই হিম্মত সিং বিদ্রোহীদের নেতা উড়িষ্যার পাঠান সর্দার” রহিম খানের” শরণাপন্ন হয়। “রহিম খান”” শাহ “উপাধি ধারণ করেন, এবং “রহিম শাহ” হয়েই ভাগীরথীর পশ্চিমাঞ্চলে অধিপত্য বিস্তার শুরু করেন।
রহিম খান ও হিম্মত সিং শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করে মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসলেন, ১৬৯৭ খ্রিস্টাব্দে “সম্রাট আওরঙ্গজেব” পৌত্র “শাহেনশাহ আজিম উস শান” কে বাংলা “সুবাহাদার” করে পাঠান। বিদ্রোহীদের দমন করার উদ্দেশ্যে সৈন্য সামন্ত, লোক লস্কর, গোলা বারুদ, নিয়ে বাঁকা নদীর দক্ষিণ পাড়ে ও দামোদর নদীর উত্তর অববাহিকায় একটি নতুন শহর/গঞ্জ পত্তন করেন, যার নাম দেন “সম্রাট ঔরঙ্গজেবের “উপাধি “আলমগীর” এর নাম অনুসারে “আলমগঞ্জ” এবং বাঁকা নদীর উপর “আলোমগঞ্জ সেতু”এবং “সড়ক এ আলমগঞ্জ” তার সঙ্গে অতীব সুন্দর একটি “আলমগীরী মসজিদ” যার পোশাকি নাম “লাখীয়া মসজিদ” ১৬৯৭ খ্রিস্টাব্দে শাহেনশাহ “আজিম উস শান” এর নির্দেশে ঢাকার নবাব জবরদস্ত খাঁ লোক লস্কর সৈন্য সামন্ত নিয়ে বর্ধমানের উপকণ্ঠে হাজির হলেন, এবং ভয়ংকর যুদ্ধে পাঠান সর্দার রহিম খান হত্যা হলেন, হিম্মত সিংয়ের দলবল আহত ও হত্যা হয়ে গেলে মুঘলদের হাতে ক্ষমতা এসে যায়। মোগল সৈন্যদের আগমনে এই এলাকায় একটি বিরাট বাজার বা হাট বসে তারই প্রচলিত নাম হয়ে যায় “নবাব হাট”। মুঘল কর্মচারী জমিদার কৃষ্ণ রামরায় এর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিলেন ন্যায় পরায়ন “শাহেনশাহ আজীম উস শান”। এই বিজয়কে চিরস্থায়ী স্মৃতি রক্ষার্থে “জীমা” (ন্যায় পরায়ন/ সক্রিয়) মসজিদ বা জুম্মা মসজিদ নির্মাণ করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct