জেনারেল ক্যাটেগরির দরিদ্র মানুষদের জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা অনুমোদনের সিলমোহর দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত এবং যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হচ্ছে। এই রায় থেকে বেশ কিছু বড় প্রশ্ন উঠে আসে। জেনারেল ক্যাটেগরির দরিদ্র মানুষদেরও কি শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া উচিত? দলিত, জনজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণির গরিবদের কি দারিদ্র্যের ভিত্তিতে দেওয়া এই সংরক্ষণের বাইরে রাখা উচিত? এ নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ প্রথম কিস্তি।
জেনারেল ক্যাটেগরির দরিদ্র মানুষদের জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা অনুমোদনের সিলমোহর দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত এবং যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের এই রায় থেকে বেশ কিছু বড় প্রশ্ন উঠে আসে। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে অনেক অসঙ্গতির জন্ম দেবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে উচ্চবর্ণের মধ্যেও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অর্থাৎ দরিদ্রদের সংখ্যা যথেষ্ট। উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে দিল্লি এবং মুম্বইয়ের মতো মহানগরগুলিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে যেতে বাধ্য হন বিপুল সংখ্যক উচ্চবর্ণের লোক, যাঁরা সামাজিক অবস্থানের কারণে নিজেদের গ্রামে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে পারেন না। এছাড়া কোনো সন্দেহ নেই যে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করে। আজকাল প্রতিটি পরীক্ষার ফলাফল টিউশন এবং কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। আপনার জাত যাই হোক, বাবা-মা যদি ব্যয়বহুল কোচিংয়ের বন্দোবস্ত না করতে পারেন, তাহলে উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির পরীক্ষায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। সেই কারণে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি ছাড়াও জেনারেল ক্যাটেগরির দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্যও উন্নত কোচিং বা টিউশনের বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন হল, এই ব্যবস্থা কি সংরক্ষণের রূপ নেবে? জেনারেল ক্যাটেগরির দরিদ্র মানুষদেরও কি শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া উচিত? দলিত, জনজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণির গরিবদের কি দারিদ্র্যের ভিত্তিতে দেওয়া এই সংরক্ষণের বাইরে রাখা উচিত? এই প্রশ্ন ছিল সুপ্রিম কোর্টের সামনে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে ১০৩তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সরকার এতদিন বজায় থাকা সংরক্ষণের পাশাপাশি জেনারেল ক্যাটেগরির দরিদ্র প্রার্থীদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। তখন সব দলই সমর্থন জানায়। এর আগে নরসিমহা রাওয়ের কংগ্রেস সরকারও একই রকম ব্যবস্থা করেছিল। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট এটিকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে। এই নতুন সংশোধনীকেও সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়। কিন্তু এবার সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ তাতে অনুমোদন দিয়েছে। সিদ্ধান্তটি সর্বসম্মত হয়নি। তিন বিচারক অর্থাৎ বিচারপতি মহেশ্বরী, ত্রিবেদী এবং পারদিওয়ালা এই সাংবিধানিক সংশোধনী বহাল রাখেন, অন্যদিকে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত এবং বিচারপতি ভাট এটিকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেন। বেঞ্চের পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ার পর তা নিয়ে অনেক কাটছেঁড়া, মন্তব্য ও বিতর্ক হবে – তা স্পষ্ট। তবে শুরুতেই আদালতের দেওয়া রায়ে দেওয়া যুক্তির ভিত্তিতে কিছু প্রশ্ন তোলা দরকার। আপাতত আইনি সমস্যাকে বাদ দিয়ে দুটি বড় প্রশ্ন উত্থাপন করা জরুরি।
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: শ্রেয়ণ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct