বিন্দির অনুভব
শংকর সাহা
বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বিন্দি বিধবা হয় । শত চেষ্টা সত্বেও স্বামীর কঠিন ব্যামো ঠিক করতে পারেনি বিন্দি। তাই অকালে স্বামীকে হারানোর ব্যথা আজও ভুলতে পারেনি সে। কোলের সন্তান পাঁচুকে নিয়ে আজ তার বেঁচে থাকা। আজ পাঁচু পাঁচ বছরে পা দিয়েছে। তার কাছে বিন্দি যেমন মা অন্যদিকে বাবা। এককথায় বেঁচে থাকার সম্বল। ছেলের গায়ে যাতে কোনো কষ্টের আঁচ না পড়ে সেইজন্যে দিনরাত্রি অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে বিন্দি। প্রতিদিন রেলস্টেশনের মাঠে যে বাজার বসে সেখানে শাঁকপাতা বিক্রি করে বিন্দি। কোনোদিন লাভটা চোখে পড়লেও কিছু কিছু দিন যা লাভ হয় তাতে সংসারের চালের দামটিও ওঠেনা।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও পাঁচুকে স্কুলে পাঠিয়ে শাঁকপাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। শাঁকপাতা সাজিয়ে নিয়ে বসে আছে বিন্দি এমন সময় জনৈক এক ভদ্রলোক এসে বলে,“ আমাকে দুআঁটি পালং শাঁক দাও?”“দিচ্ছি বাবু”শাঁকের দাম দিতে গিয়ে সেই জনৈক ভদ্রলোকের নজরে পড়ে বিন্দির ব্যাগের ভেতরে রাখা দুটো বই।তিনি প্রশ্ন করেন,“ এই বইগুলো কার জন্যে নিয়েছ ? এ যে ‘বর্ণপরিচয় ?”“এগুলো আমার ছেলের বাবু। ও ইস্কুলে পড়ে।।““এত কষ্টের মধ্যেও ওকে পড়াচ্ছো?সত্যিই তুমি আসল মায়ের কাজ করে দেখালে”বিন্দি বলে ওঠে,”বাবু ,ছেলেটাকে আমি মানুষ করতে চাই। ও পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠুক এটাই যে আমার স্বপ্ন।”ভদ্রলোক হেসে বললেন,” জানো বিন্দি আমরা সকলেই শৈশবে এই “বর্ণপরিচয়” পড়েছি। এই বর্ণপরিচয় আমাদের সকলের এক সম্পদ ও গর্ব।’বিন্দি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। হঠাতই পকেট থেকে দুশো টাকার নোট বের করে বিন্দিকে দেয় ।বিন্দি নিতে অস্বীকার করলে লোকটি বলে ওঠে,“এটি,আমি তোমার ছেলের পড়াশোনার জন্যে দিলাম। ও একদিন অনেক বড় হবে!”সেই ভদ্রলোকের হাত থেকে টাকাটি নিয়ে বিন্দি বলে ওঠে,“বাবু আপনি মহান।”“না,আমি না।মহান তো তুমি.....”বিন্দি বাকরুদ্ধ হয়ে যায়! বিন্দির দিকে চেয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আসি বিন্দি।একদিন এসে তোমার ছেলের হাতে লেখা স্বরবর্ণ ও ব্যজ্ঞনবর্ণগুলো দেখবো?”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct