আপনজন ডেস্ক: ধরা যাক, শখের কোনো খাবার আজ রান্না করবেন বলে মনস্থির করেছেন, কিন্তু শেষ বেলায় আর সেটা করতে ইচ্ছে হল না। অথবা কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার ইচ্ছে শেষ মুহূর্তে মরে গেল। কিংবা জীবনের কোনো কিছুই আর করতে ভালো লাগছে না হঠাৎ করে। জীবনের কোনো এক পর্যায়ে এরকম মনে হতেই পারে। আর মনোবিজ্ঞানে এর নাম ‘অ্যানহিডোনিয়া'। এই পরিস্থিতে একজন ভাবতে থাকে, সব কিছু করাই অর্থহীন যেহেতু কোনো কিছুতেই আনন্দ নেই। এই অ্যানহিডোনিয়া বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা কিংবা কোনো দুর্ঘটনার পর মানসিক সমস্যায় ভোগায়।এই রকম মানসিক অসুস্থতার সাধারণ একটি লক্ষণ হলো ‘অ্যানহিডোনিয়া'। ফ্লোরিডার মনোবিজ্ঞানি ড. সিগাল লেভি বলেন, 'মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ কোনো পরীক্ষায় ধরা না পড়লেও পরিস্থিতিগত বিষণ্নতা বা পরিস্থিতির কারণে ‘অ্যানহিডোনিয়া’তে মানুষ ভুগতে পারে। এই পরিস্থিতির শিকার বহু মানুষই হয়, অন্তত জীবনে একবার হলেও।' মস্তিষ্কের একটা অংশ রয়েছে, যাকে বলে ‘রিওয়ার্ড সার্কিট', মানে কোন কাজ করলে পুরস্কার মিলবে বা আনন্দ পাওয়া যাবে বা যোগ্যতার সম্মান আসবে- সেটা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের এই অংশ। 'আর মস্তিষ্কের এই কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় ডোপামিন হরমোনের মাধ্যমে,' বলেন আটলান্টার ‘এমোরয় ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘সাইকিয়েট্রি অ্যান্ড বিহেইভিওরাল সায়েন্স' বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জেনিফার ফেলগার। আসলে আমাদের আশপাশে যা ঘটে চলেছে সেগুলো মানসিক শান্তি নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। যে কোনো জিনিসের দাম বৃদ্ধি, চাকরির অভাব, তেলের দাম বাড়া, যুদ্ধ লাগা বা পরিবারের জন্য ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারা- সব কিছু মিলিয়ে যে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাতে মানসিক চাপ বাড়তেই থাকে।
এটা থেকে বাঁচতে মনের জোর খাটাতে পারেন। কারও কারও বংশগত কারণে ডোপামিনের সামান্যতম অসামঞ্জস্যতা থাকে। তবে বিভিন্নভাবেই এই হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক করার উপায় রয়েছে। যেমন- পর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানো। এই ধরনের বিষয়গুলো শরীর ও মনের প্রদাহ কমায়। তাই আনন্দ ফিরিয়ে আনতে এগুলোই হবে প্রধান চাবিকাঠি।' ডা. নাড্যু’র ভাষায়, 'সামাজিক যোগাযোগ কমে যাওয়ার কারণেও অনেকসময় মানুষের মাঝে বিষণ্নতা ও ‘অ্যানহিডোনিয়া’দেখা দেয়।' বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার কমানো, বিশেষ করে রাতে। মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটারের থেকে পাওয়া আনন্দ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকে এসব যন্ত্র থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যা কিনা ভালো ঘুমের জন্য উপকারী। নিজেকেই নিজের প্রিয় বন্ধু ভাবুন। হাঁটতে যাওয়া বা কারও সাথে গল্প করা। এই সময়ের জন্য কোনটা বেশি উপকারী? কীভাবে নিজের যত্ন নিতে আমি আরও কর্মক্ষম হব?” এই চিন্তা ভাবনার ধারা চিহ্নিত করতে পারলে নিজের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারগুলো সহজ হবে। কোনো কিছু না করার চাইতে কিছু করার চেষ্টার মনোভাব গড়ে তোলার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ বা কর্মক্ষম হওয়ার মতো সক্ষমতা ফিরে পাওয়া যায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct