মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: বর্ধমান শহরের বড় নীলপুর বাজার ঢোকার আগেই কামারপুকুর বলে একটি বড় দীঘি আছে। দিঘী পেরোলেই ডান হাতে এই মসজিদটি দেখতে পাওয়া যাবে। মসজিদটি দীর্ঘদিন ভেঙেচুরে পড়েছিল বলে এলাকার মানুষজন এটিকে ভাঙ্গা মসজিদ বলে অভিহিত করত।মধ্যযুগের বর্ধমান অর্থাৎ শরিফা বাদে নীলপুর এলাকা মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত বেশ বেশিই ছিল, সেই সময় এখানে অনেকগুলি মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পরবর্তীকালে বিনষ্ট হয়ে গেছে। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে নীলপুরের জমিদার “মোবারক মন্ডল” নিজস্ব জমিদারি জায়গায় এই “বড় নীলপুর মসজিদটি” নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নীলপুর এলাকা মুসলিম জনসংখ্যা বেশ কিছু কারণে কমে যেতে থাকে, অর্থাৎ মুসলিম- মানুষজন নীলপুর ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যেতে থাকেন,এলাকায় মুসলিম মানুষ জন না থাকায়, মসজিদগুলি বিরান হতে শুরু করে।
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে দলিল নাম্বার ৮৫০ দলিল মূল্যে জমিদার মরহুম “মোবারক মন্ডলের” বংশধররা অর্থাৎ ১) আক্কেল আলী ২) বন্দেক আলী ৩) আজিজুল রহমান,৪) সৈয়দুর রহমান, মসজিদের নামে একটি দলিল সম্প্রদান করেন এবং নিজেরা উক্ত মসজিদের মাতোয়ালি নিযুক্ত হন। মসজিদের জায়গাটির দাগ নাম্বার ৮০৪ যা ৩ শতক, এবং মসজিদ পরিচালনার জন্য ইসলা বাজার(ইসলামা বাজার অপভ্রংশ হয়েছে) মৌজায় ২ বিঘা,সরাইটি গড় ( সরাই - পান্থশালা, গড় - দুর্গ, টিকে- তামাক জ্বালাবার জন্য বিশেষ দ্রব্য, অর্থাৎ মুঘল যুগে বা সুলতানি যুগে এখানে সরাইখানা বা পান্থশালা ছিল এবং সুগন্ধি তামাকের টিকে পাওয়া যেত এবং অবশ্যই এখানে একটি মুঘল বা সুলতানি আমলের সৈন্যদের দুর্গ ছিল এই জন্য এর নাম “সরাইটি গড়” হয়েছে বলেই অনুমান), এই গ্রামের ভোতার পাড়ে ৬বিঘা জমি,বাম - চাঁদাইপুরে “বাম” গ্রামে ২ বিঘা জমি/সম্পত্তি মসজিদের নামঅন্তর্ভুক্ত ওয়াকফ করে দিয়ে যান।ওই একই দলিল মূল্যে ৩৩৮ দাগ “ছোট নীলপুর কবরস্থানের” ভেতর ৩৮ শতক জায়গা, পূর্বপুরুষদের কবর থাকায় ,নতুন করে ওয়াফ /উৎসর্গ/দান করে দিয়ে যান। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে সাধের মসজিদ, বাড়ি, ঘর ,সমস্ত সম্পত্তি ,ছেড়ে দিয়ে জমিদার পরিবারের সদস্যরা জামালপুর অঞ্চলে চলে যান। আস্তে আস্তে সমস্ত সম্পত্তি বেদখল হয়ে যায়। গোটা নীলপুরটাই এক সময় জমিদারির সম্পত্তির অন্তর্গত ছিল বলে জানালেন তাদের পূর্বপুরুষরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct